প্রতিমা বানানোর জন্য দু’মাস ছুটি পেয়েছেন। কিন্তু তা-ও সময়মতো কাজ শেষ হবে কি না, সেই দুশ্চিন্তাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে কালীঘাট থানায় কর্মরত কনস্টেবলকে। অসুরের হাতের বালা বানাতে বানাতে দিবাকর মণ্ডল নামে ওই কনস্টেবল বলছেন, ‘‘নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত কাজ করছি। দুর্গা ও বাকি মূর্তিগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও রং করা এবং অন্য অনেক কাজ বাকি রয়েছে।’’
আলিপুরে বডিগার্ড লাইন্সের আবাসনে সপরিবার থাকেন বছর পঁয়ত্রিশের দিবাকর। তবে গত দু’মাস অবশ্য বাড়িতে নয়, বেশির ভাগ সময় কাটছে বডিগার্ড লাইন্সের ফুটবল মাঠের ধারে। কারণ, সেখানেই ত্রিপল বেঁধে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরো দমে। সহকারী হিসেবে সঙ্গে পেয়েছেন ভাই বিক্রমকে। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি দাদার ফাইফরমাশ খাটি। প্রতিমা বানানোর খুঁটিনাটি কাজ সব দাদাই করে।’’ কাজের চাপ কমাতে সাহায্য করছেন স্ত্রী সঞ্চয়িতাও।
মাটির প্রতিমা বানানো শুরু কবে থেকে? আদতে মালদহের রতুয়ার বাসিন্দা দিবাকর জানাচ্ছেন, তাঁর বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। বাড়িতে কেউ কখনওই মৃৎশিল্পের কাজ করেননি। কিন্তু ছোট থেকেই মূর্তি বানানোর নেশা ছিল তাঁর। দিবাকর বলেন, ‘‘পাড়ায় দেখতাম এক মৃৎশিল্পী প্রতিমা বানাতেন। ঠায় দাঁড়িয়ে তাঁর কাজ দেখতাম। তাঁর থেকেই কাজ শেখা।’’
ছ’বছর আগে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন দিবাকর। তার আগে রতুয়াতেই প্রতি পুজোয় ১০/১২টি করে প্রতিমা বানাতেন দিবাকর। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে অবশ্য সে সব বন্ধ ছিল কিছু দিন। এর পরে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে আবাসনে থাকার জায়গা পাওয়ার পরে জানতে পারেন যে, সেখানে পুজো হয়। দিবাকরের কথায়, ‘‘কয়েক জন সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে, প্রতিমা আসে কুমোরটুলি থেকে। তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই যে, আমি মূর্তি বানাতে পারি। সুযোগ দিলে ভাল লাগবে।’’
আর্জি বৃথা যায়নি। গত বছর বডিগার্ড লাইন্সের পুজোতেই প্রতিমা তৈরির বরাত পান দিবাকর। আর প্রথম বারেই বাজিমাত! তাই এ বছরেও প্রতিমা বানানোর দায়িত্ব পড়েছে তাঁর উপরেই। তবে শুধু দুর্গাপ্রতিমাই নয়। এ বার বডিগার্ড লাইন্সের সব পুজোরই মূর্তি বানানোর বরাত দিবাকরকেই দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তবে এর জন্য অবশ্য বেশি ছুটি পাননি ওই কনস্টেবল। তাতে অবশ্য দুঃখ নেই। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মূর্তি বানানোর সুযোগ পেয়েই তিনি খুশি। বলছেন, ‘‘চাকরি পেয়ে ভেবেছিলাম, মূর্তি বানানোর নেশাটাই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। এখনও যে প্রতিমা বানাতে পারছি, সেটাই আনন্দের।’’