একটি শিশুমৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন দু’মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয় শনিবার সকালে। পরিবারের অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের ভুলেই শিশুটি মারা গিয়েছে। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে দোষী চিকিৎসক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে হাসপাতালের সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা। যদিও হাসপাতালের তরফে ডিরেক্টর মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও জানি না। সোমবার খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তবে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির পরিজনদের হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, জ্বর ও বুকে সংক্রমণ হওয়ায় দু’মাসের শিশুপুত্রকে গত ১৩ জুন এসএসকেএমের শিশু বিভাগে ভর্তি করেছিলেন হাওড়ার ডোমজুড়ের বাসিন্দা লাল্টু রায়। লাল্টুবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমার বাচ্চা টানা কুড়ি দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কুড়ি দিনের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাত্র চার দিন উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক দিন সকালে ই়ঞ্জেকশন দেওয়া হলেও শুক্রবার সকালে ছেলেকে ইঞ্জেকশন দিতে ভুলে যান কর্তব্যরত নার্সরা। পরে নার্সদের বিষয়টি জানালে ওই রাতেই আমার বাচ্চাকে পরপর দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।’’
লাল্টুবাবু জানান, ২১ জুন হাসপাতাল তার ছেলেকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনও শিশুটির ঘুসঘুসে জ্বর ও কাশি ছিল। লাল্টুবাবুরাই হাসপাতালকে জানান, একেবারে সুস্থ হওয়ার পরেই তাঁরা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান। এর পরে আরও ৩-৪ দিন তাঁর ছেলে ভালই ছিল বলে জানিয়েছেন লাল্টুবাবু। ২৮ জুন থেকে তার জ্বর বাড়তে শুরু করে। লাল্টুবাবুর কথায়, ‘‘সব সময়ে ১০২-এর উপরে জ্বর থাকছিল। কখনও আবার ১০৫-এর উপরেও উঠে যাচ্ছিল।’’ সেই কারণে গত মঙ্গলবার থেকেই তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া শুরু হয়।
মৃত শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, প্রথম দিন থেকেই ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা থাকছিলেন তার মা সুষমাদেবী। একটানা স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল শিশুটিকে। তার মাধ্যমেই ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল শিশুটিকে। দিনে দু’বার করে সেই স্যালাইনের মধ্যে দিয়েই দেওয়া হচ্ছিল অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন। শুক্রবার বিকেলে লাল্টুবাবু হাসপাতালে গেলে সুষমাদেবী তাঁকে জানান, হাত নেড়ে স্যালাইনের সূচ খুলে ফেলেছে ছেলে। সে দিন দুপুরে তাই আর অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। লাল্টুবাবুর কথায়, ‘‘এর আগেও বেশ কয়েক বার হাত নেড়ে স্যালাইনের সূচ খুলে ফেলেছিল আমার ছেলে। প্রতিবারই তা আবার লাগিয়ে দিয়েছেন কর্তব্যরত নার্স। কিন্তু, শুক্রবার সন্ধ্যায় বারবার নার্সদের বলা সত্ত্বেও তাঁরা সেই সূচ লাগাতে অনেক দেরি করেন।’’
শুক্রবার রাতে পরপর দু’টি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় শিশুটিকে। লাল্টুবাবুর অভিযোগ, সেই অতিরিক্ত ওযুধের মাত্রা সহ্য করতে না পেরেই শুক্রবার রাত থেকে তাঁর ছেলের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শিশু বিভাগের তরফে রাতেই কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা শিশুটিকে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়— আইসিসিইউ-তে বেড না থাকায় ওখানে ভর্তি করা যাবে না। ফলে পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগেই তাকে রাখা হয়েছিল। শনিবার সকালে সেখানেই মারা যায় শিশুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy