Advertisement
০২ মে ২০২৪

পুজোর পরেও রাস্তা খন্দময়, হোঁচট খাচ্ছে শহর

পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর ছিল কলকাতায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শেষ দিন। তার পরে ১৮ দিনেরও বেশি কেটে গিয়েছে। এখনও গর্ত বোজানো হয়নি অরবিন্দ সরণির বেশির ভাগ জায়গায়।

বেহাল: পুজোর প্রায় এক মাস পরেও হাতিবাগান এলাকার একটি মণ্ডপের সামনে রয়ে গিয়েছে গর্ত। ছবি: সুমন বল্লভ

বেহাল: পুজোর প্রায় এক মাস পরেও হাতিবাগান এলাকার একটি মণ্ডপের সামনে রয়ে গিয়েছে গর্ত। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

পথের ক্ষত সারল তো না-ই, বরং বাড়ল। আরও একটি শারদোৎসব শেষে এখন সেই ক্ষত নিয়েই চিন্তায় পুর প্রশাসন। পুরসভার কর্তারা জানাচ্ছেন, শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার খানাখন্দ নিয়ে এমনিতেই বছরভর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। সেই সঙ্গে পুজোর শেষে যুক্ত হয় মণ্ডপ বা হোর্ডিংয়ের জন্য খোঁড়া অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টির জল জমে সেই সমস্ত গর্তই এ বার হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গিবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের আঁতুড়ঘর। পুরসভার বক্তব্য, শহর জুড়ে গর্ত খুঁজে বার করে তা বোজানোর মতো লোকবল তাদের নেই। তা ছাড়া, ‘পুজোর ছাড়’ হিসেবে রাস্তা খোঁড়ার জন্য ‘রেস্টোরেশন চার্জ’ও পুজো কমিটিগুলির থেকে নেয় না পুরসভা। সব মিলিয়ে বাড়তেই থাকে পথের ক্ষত!

পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর ছিল কলকাতায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শেষ দিন। তার পরে ১৮ দিনেরও বেশি কেটে গিয়েছে। এখনও গর্ত বোজানো হয়নি অরবিন্দ সরণির বেশির ভাগ জায়গায়। সেখানে কোথাও ফুটপাত থেকে পথে নামতে গিয়ে গর্তে হোঁচট খেতে হচ্ছে। কোথাও আবার মণ্ডপের জন্য খোঁড়া গর্ত ভরে উঠেছে প্লাস্টিক বা খাবারের ঠোঙায়। একই অবস্থা রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও শরৎ বসু রোডের। সেখানে পুজো কমিটির খোঁড়া গর্ত তো রয়েইছে, পাশাপাশি জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর জন্য খোঁড়া গর্তেও। দর্শনার্থীদের জন্য সেখানে প্লাইউডের কাঠামো পাতা হয়েছিল। কাঠামো তুলতেই এখন পার্ক জুড়ে বেরিয়ে এসেছে বৃষ্টির জলে ভরা গর্ত। গাফিলতির বিষয়টি মেনে নিয়ে দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘গর্ত বুজিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই সব বুজিয়ে দেওয়া হবে।’’ পুজো মণ্ডপ তৈরি হওয়ার জেরে একই পরিস্থিতি টালা পার্ক বা জগৎ মুখার্জি পার্কেরও।

পুজোর গর্ত খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না ডায়মন্ড হারবার রোড ও তার আশপাশের বিভিন্ন গলিতেও। পুজোর আগে থেকেই সেখানকার রাস্তার অবস্থা নিয়ে অভিযোগ ছিল। ওই এলাকায় অটোর অপেক্ষায় থাকা সুশীল দত্ত নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমার কোমরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখানে অটোয় উঠলে চোট লাগার ভয় করে। এখানকার রাস্তার সমস্যা নিয়ে কেউ হয়তো ভাবেনই না।’’ আমহার্স্ট স্ট্রিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ক্ষেত্রেও ক্ষত নিয়ে কারও ভাবনা নেই। দুর্গাপুজো মিটতে এখন সেখানে রাস্তা জুড়ে একের পর এক কালীপুজোর মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই খুলে ফেলা দু’টি মণ্ডপের সামনে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে গর্ত। বাঁশ, দড়ি খুলেই দায় ঝেড়ে ফেলা পুজো উদ্যোক্তাদের এক জন বললেন, ‘‘আমরা আর কত দেখব? পুলিশ দ্রুত রাস্তা ফাঁকা করতে বলেছে। সেই কাজ করব, না গর্ত বোজাব? এ কাজ তো পুরসভার।’’

আরও পড়ুন: ‘প্রায় সবাই ম্যাচ গড়াপেটা করত, মাঠে নেমে ২১ জনের বিরুদ্ধে খেলতে হত’​

আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন অভিনেত্রী জুন মাল্য

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে বললেন, ‘‘পুজো কমিটি না করলে আমরাই রাস্তা বোজাব। কাজ শুরুও হয়েছে। সব জায়গায় রাস্তা বোজানোর মতো লোকের সত্যিই অভাব।’’ কোনও রাস্তা খোঁড়া হলে তার সংস্কার বাবদ তো টাকা নেয় পুরসভা। টাকা দিয়েও সর্বত্র কাজ হবে না কেন? রতনবাবুর জবাব, ‘‘পুজোর সময়ে সব ছাড়। কোনও পুজো কমিটির থেকেই রেস্টোরেশন চার্জ নিই না আমরা।’’প্রশ্ন থেকে যায়, তবে কি গর্ত নিয়ে চলাই ভবিতব্য? স্পষ্ট উত্তর মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pot Holes Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE