Advertisement
E-Paper

ঝোপ বুঝে কোপ ক্যাবের

কখনও মেট্রো বন্ধ তো কখনও বৃষ্টি, কখনও আবার উৎসব বা ইডেনে খেলা। যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকতে অজুহাতের অভাব নেই। মিটারে যা ওঠার কথা ৫০, অনায়াসেই সেই পথ যেতে লেগে যায় ২৫০-৩০০ টাকা। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০২

পার্ক স্ট্রিট থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন যেতে হলুদ ট্যাক্সি হাঁকল ১৫০ টাকা। মেট্রো বন্ধ, বাসে পা রাখার জায়গা নেই। রেগেমেগে হাত যায় ফোনের পর্দায়। সঙ্গে সঙ্গে ছেঁকা। অ্যাপ-ক্যাবের দাবি ততক্ষণে ২৫০ ছুঁয়েছে!

কখনও মেট্রো বন্ধ তো কখনও বৃষ্টি, কখনও আবার উৎসব বা ইডেনে খেলা। যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকতে অজুহাতের অভাব নেই। মিটারে যা ওঠার কথা ৫০, অনায়াসেই সেই পথ যেতে লেগে যায় ২৫০-৩০০ টাকা।

পরিস্থিতি যেমনই হোক, সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করতে ছাড়ে না অ্যাপ-ক্যাব। দুর্যোগ বা উৎসবের সময়ে আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকা যেন সব ক্যাব সংস্থার অভ্যাস।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেট্রো বিভ্রাটের পরেও সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা সে কথাই মনে করিয়েছে। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে শুরু করে মেট্রো চলাচলে দফায় দফায় ব্যাঘাত ঘটে। বাড়ি ফিরতে ট্যাক্সির উপরে যাঁরা ভরসা করেছেন, তাঁদের অনেককেই অতিরিক্ত গাঁটের কড়ি গুনতে হয়েছে। যাঁরা চড়েছেন অ্যাপ-ক্যাবে, তাঁদের তো কথাই নেই।

দুর্ভোগে পড়া মেট্রোযাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন, হঠাৎ মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাস-ট্রামেও ভিড় অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যায়। তাই ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাব না ধরে উপায় ছিল না। কিন্তু তার জন্য যা খরচ করতে হয়েছে, তা অভাবনীয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, যে দূরত্বের ভাড়া বড়জোর ১০০ টাকা, ওই রাতে সেটুকু যেতেই চাওয়া হয়েছে ৩০০ বা ৪০০ টাকা! হলুদ ট্যাক্সির অধিকাংশ চালকও সুযোগ বুঝে মিটারে যেতে প্রত্যাখ্যান করে ইচ্ছে মতো ভাড়া হেঁকেছেন। এক যাত্রীর অভিযোগ, ধর্মতলা থেকে টালিগঞ্জ যেতে এক হলুদ ট্যাক্সিওয়ালা ৬০০ টাকা দাবি করে বসেন। কেউ কেউ আবার মাথাপিছু ২৫০-৩০০ টাকা ভাড়ায় চার জন করে যাত্রী নিয়ে গিয়েছেন।

মধ্য কলকাতার একটি কলেজের বিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী রূপসা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অঙ্কিতা ভট্টাচার্য জানালেন, কলেজের একটি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে রাত পৌনে ৮টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে এসে তাঁরা শোনেন, মেট্রো চলছে না। তখন পার্ক স্ট্রিট থেকে সেন্ট্রাল স্টেশন পর্যন্ত যেতেই অ্যাপ-ক্যাব ৫০০ টাকার উপরে ভাড়া দাবি করে। একই অভিযোগ করেছেন কলেজপড়ুয়া দুই ছাত্র অভিরূপ বসাক ও সম্বিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, ‘‘অনেক বেশি ভাড়া চাওয়ায় হলুদ ট্যাক্সিতে ওঠা গেল না। ধর্মতলা থেকে শোভাবাজার— এই সামান্য দূরত্বে যেতেও অ্যাপ-ক্যাব ৬০০ টাকার কাছাকাছি চেয়েছে।’’ টালিগঞ্জের বাসিন্দা ময়ূরী সাহা জানান, ট্যাক্সির ভাড়া শুনে শেষে ভিড় বাসে কার্যত পুরো রাস্তাটাই পাদানিতে দাঁড়িয়ে পৌঁছন তিনি। ট্যাক্সিওয়ালাদের অন্যায় দাবি মানবেন না বলে অনেকটা একই ভাবে কষ্ট করে ফিরেছেন বিমা সংস্থার আধিকারিক রীতা সরকার কিংবা রাজ্য সরকারের কর্মী অভিরূপ গুহ।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক প্রমোদ ঝা বলেন, ‘‘মানুষ বিপদে পড়লে তাঁদের পরিষেবা দেওয়াই পরিবহণ কর্মীদের কাজ। কিন্তু এক শ্রেণির ট্যাক্সিচালক তা বোঝেন না।’’ অতিরিক্ত ভাড়া প্রসঙ্গে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা উব্‌রের কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা নিরাপদ ও ভরসাযোগ্য পরিষেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে অঞ্চলে যেমন চাহিদা তৈরি হয়, চালকদের সেখানেই যেতে বলা হয়, যাতে যাত্রীদের বেশি পরিষেবা দিয়ে চাহিদা মেটানো যায়। ওলা-র কলকাতার জেনারেল ম্যানেজার জাগৃত চৌধুরী জানান, বিপদে চাহিদা বাড়লে তাঁরা গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে ও দায়িত্বপূর্ণ চালকদের এনে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

Kolkata metro deralment aap cab লাইলচ্যুত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy