দুর্ঘটনায় কেটে বাদ যাওয়া পা-সমেত রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে এলেও সেই পা জোড়া লাগার সম্ভাবনা কার্যত থাকে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের মত, অঙ্গ কেটে যাওয়ার পরে যখন কোনও রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়, তখন ওই অবস্থায় একাধিক হাসপাতালে ভর্তির জন্য ঘুরে বেড়ানোর অর্থ হল, মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। বুধবার প্রায় গোটা দিন কুলতলির মৈপীঠের বাসিন্দা সুনীল পাত্রকে ঠিক সেই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
তাঁর বাড়ির লোকজন তো বটেই, এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তুলেছেন, কেন দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত, রক্তাক্ত এক জন রোগীকে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের জন্য ঘুরে বেড়াতে হবে? কেন তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে রক্ত এবং স্যালাইনটুকুও দেওয়া হবে না? আপাতত এসএসকেএমের অর্থোপেডিক্স-এর আইসিইউ-৩ তে ভর্তি রয়েছেন সুনীলবাবু। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সেখানকার ডাক্তারেরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ অনুপম গোলাস এবং বিজয় মজুমদারের মতো অনেকেরই মত, কাটা হাত বা আঙুল সময় মতো নিয়ে এলে অনেক ক্ষেত্রে তা জোড়া দেওয়া যায়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোনও দেশেই কাটা পা জোড়া দেওয়ার তেমন কোনও সফল নজির কার্যত নেই। কারণ, পায়ের মাংসপেশী, শিরা-ধমনী খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। একমাত্র
খুব ছোট বাচ্চা ছাড়া পা জোড়া দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্নটা উঠছে, পা বাদ যাওয়া রোগীর দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে। সেটা দেওয়া না হলে রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সুনীলবাবুকে নিয়ে প্রায় দশ-বারো ঘণ্টা ঘুরেছিলেন তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘ওই রোগীর শরীরে যে গ্যাংগ্রিন শুরু হয়নি,
এটাই অনেক।’’
দুর্ঘটনার পর থেকেই সুনীলবাবুকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছিলেন যে প্রতিবেশী, সেই সনাতন জানার আক্ষেপ, ‘‘গরিব পরিবার। সংসারের একমাত্র রোজগেরে বলতে সুনীল। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। বাড়িতে স্ত্রী, দুই কিশোরী মেয়ে, অসুস্থ বাবা। কী করে কাজ করবেন এখন? ওঁদের পরিবারটাই তো এ বার পথে বসবে।’’
সুনীলবাবুর পরিজনেরা জানান, তাঁরা এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করবেন। বুধবার রাতেই স্বাস্থ্য-অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, লিখিত অভিযোগ মিললেই তাঁরা তদন্ত শুরু করবেন। এবং দোষ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
লরির ধাক্কায় বুধবার বাঁ পা কাটা পড়ে সুনীলবাবুর। সেই অবস্থায় কাটা পা-টি একটি প্লাস্টিকে মুড়ে গুরুতর আহত সুনীলবাবুকে নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান তাঁর পরিজনেরা। তাঁর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সল্টলেকের ক্যালকাটা
হার্ট ক্লিনিক ও একবালপুরের ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্ট ইনস্টিটিউট রোগীকে ভর্তি না-নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। ভর্তির জন্য সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলেছিলেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ওই রকম কোনও রোগীকে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy