Advertisement
০৯ মে ২০২৪
পথের দাবি/১

স্কুল ছুটির ভিড়ে নিস্তার নেই অ্যাম্বুল্যান্সেরও 

ছুটির সময়ে স্কুলের বাস, পুলকারের ভিড়ে নিজের বাড়িতেও ঢুকতে পারেন না অনেকে। নাজেহাল হয়ে প্রতিবাদ জানাতে গত সোমবার পথে নেমেছিলেন বালিগঞ্জ প্লেসের বাসিন্দারা। শহরের বাকি স্কুল চত্বরের পরিস্থিতি কেমন? সেখানেও কি একই হাল এলাকাবাসীর? এসএসকেএম হাসপাতালের ঠিক সামনের হরিশ মুখার্জি রোডে এমনিতে গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ

অবরুদ্ধ: এ জে সি বসু রোডের একটি স্কুল থেকে বেরোচ্ছে পড়ুয়ারা। এই সময়ে ওই গলিতে বাসিন্দাদের গাড়ির প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অবরুদ্ধ: এ জে সি বসু রোডের একটি স্কুল থেকে বেরোচ্ছে পড়ুয়ারা। এই সময়ে ওই গলিতে বাসিন্দাদের গাড়ির প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালের ঠিক সামনের হরিশ মুখার্জি রোডে এমনিতে গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ। তবে হাসপাতালের ঠিক উল্টোদিকে ‘গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ হওয়ায় কিছুটা ছাড় দেয় পুলিশ। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে (স্কুল ছুটির সময়) পর্যন্ত সেখানে এক লেনে গাড়ি রাখা যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেল, এক লেনের ‘নিয়ম’ উড়িয়ে সেখানে তিন লেনে গাড়ির লম্বা লাইন!

বিকেল ৪টে নাগাদ স্কুল ছুটি হতেই সেই গাড়ির লম্বা লাইন অবরুদ্ধ করে দিল হরিশ মুখার্জি রোড থেকে একেবারে শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট পর্যন্ত। সেই যানজটে আটকে পড়ল এসএসকেএম হাসপাতালে আসা অ্যাম্বুল্যান্স। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পরে রোগীর আত্মীয় নেমে রাস্তা ফাঁকা করার চেষ্টা শুরু করলেন। দেখা গেল না কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে।

হাসপাতালের গেটে এই অবস্থা কেন? গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের অধ্যক্ষা ইন্দ্রাণী মিত্র বললেন, ‘‘ছুটির সময়টায় একটু অসুবিধা তো হয়েই যায়। কিন্তু, পুলিশ খুব ভাল কাজ করে এখানে। রোগীদের সে রকম সমস্যা হয় না।’’ এলাকাটি ভবানীপুর থানার আওতায়। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘গাড়িগুলি কোথায়ই বা পাঠাব? আমাদের লোক সর্ব ক্ষণ নজর রাখে।’’ কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘স্কুলপড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যা করা যায়, করা হয়।’’

স্কুলের গাড়ির জটে ভুগতে হচ্ছে বলে চলতি সপ্তাহেই রাস্তায় বসে পড়ে অভিনব প্রতিবাদ দেখিয়েছেন গড়িয়াহাটের কর্নফিল্ড রোডের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সকাল থেকে স্কুলের বাস, পুলকারে পাড়ার রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। এ দিন শহরের নানা স্কুল চত্বরে ঘুরে দেখা গেল, সেখানকার চিত্রও কর্নফিল্ড রোডের থেকে আলাদা নয়। ছুটির সময়ে তো বটেই, তার আগে থেকেই স্কুলে আসা গাড়ি দখল নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার। স্কুলগুলি বলছে, তারা নিরুপায়। গাড়ি রাখতে দেওয়ার মতো জায়গা তাদের নেই। স্কুলগুলির দাবি, রাস্তায় পুলিশ থাকে। যানজটে সমস্যা হয় না। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, একমাত্র ছুটির সময়ে স্কুলের সামনে পুলিশকে দেখা যায়। কিন্তু বাকি সময়ে বাড়ির দরজা আটকে স্কুলের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে দেখবে কে?

এন্টালি থানার ঠিক পিছনেই একটি স্কুলের সামনে পুলকারের দাপটে বহুতলে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুজানা গিলেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রতিদিন ঝামেলা করে এই সব গাড়ি সরাতে হয়। সামনে থানা হলেও কেউ দেখতে আসেন না।’’ একই চিত্র শহরের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোডে। দুপুর ২টোর বহু আগে থেকেই ধর্মতলা পর্যন্ত সেই পথে গাড়ির গতি কম। সেখানেকার ‘দ্য ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল’ ছুটি হয় ২টো নাগাদ। তখন সেই পথ থাকে কার্যত অবরুদ্ধ। সেখানকার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাজেহাল শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী দেখলেন, রাস্তায় জায়গা না পেয়ে ফুটপাতে পুলকার তুলে দিচ্ছেন এক চালক। ছুটে গিয়ে ‘কেস’ দেওয়ার ভয় দেখালে গাড়ি নামল ফুটপাত থেকে! ‘ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল’-এর অধ্যক্ষ রাজা ম্যাকগিরও বলেন, ‘‘পুলিশ সাহায্য না করলে এই সরু রাস্তায় স্কুল চালানো সমস্যার। গাড়ি রাখতে দেওয়ার জায়গা সত্যিই স্কুলে নেই।’’

স্কুলের গাড়ির জটের আর এক চিত্র ময়রা স্ট্রিট হয়ে রডন স্ট্রিট এবং এ জে সি বসু রোডে। ওই এলাকায় দু’টি স্কুল রয়েছে। দেখা গেল, স্কুল ছুটি হওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকেই এক লেনের পরিবর্তে তিন লেনে গাড়ি দাঁড়িয়ে। নাতনিকে স্কুল থেকে নিতে আসা হাওড়ার বাসিন্দা দীপক ঘোষ নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘কোথায় গাড়ি রাখব বলুন? পুলিশ গাড়ি ধরে ধরে কেস দিচ্ছে। হাওড়া থেকে কি হেঁটে আসব?’’ বিকেলে তারই একটি স্কুলের অন্তত সাতটি বাস বেরিয়ে যাওয়ার পরে গলির লম্বা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করল স্কুলের পড়ুয়ারা। তখন সেই পথে পাড়ার লোকেদের যাতায়াত কার্যত ‘নিষিদ্ধ’। স্কুটি বা মোটরবাইক দেখলেই দাঁড় করিয়ে দিতে দেখা গেল স্কুলের নিরাপত্তাকর্মীদের। ময়রা স্ট্রিটে দেখা গেল, নিজের আবাসনে ঢোকার আগে গাড়ি থেকে নেমে প্রবল চিৎকার করছেন এক আইনজীবী। বলছেন, ‘‘গাড়ি সরাও বলছি। নয়তো পুলিশ ডাকিয়ে তুলিয়ে দেব।’’

গড়িয়াহাটের প্রতিবাদী বাসিন্দাদের থেকে চিত্রটা অন্যত্র কিন্তু খুব একটা আলাদা নয়! (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance School Civic Issues
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE