Advertisement
০৩ মে ২০২৪

এটিএমে কার্ড দিতেই অন্ধকার, টাকা লোপাট

শহরতলির মধ্যমগ্রামের পরে এ বার খাস কলকাতার সার্ভে পার্ক। আবার এটিএম জালিয়াতি। মধ্যমগ্রামে টাকা লোপাটের ব্যাপারটা ধরা পড়েছিল কয়েক দিন পরে। সোমবার সার্ভে পার্কে টাকা হাতানো হল একেবারে গ্রাহকের নাকের ডগায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

শহরতলির মধ্যমগ্রামের পরে এ বার খাস কলকাতার সার্ভে পার্ক। আবার এটিএম জালিয়াতি। মধ্যমগ্রামে টাকা লোপাটের ব্যাপারটা ধরা পড়েছিল কয়েক দিন পরে। সোমবার সার্ভে পার্কে টাকা হাতানো হল একেবারে গ্রাহকের নাকের ডগায়।

সার্ভে পার্কের সন্ধ্যাবাজারে স্টেট ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে ঢুকেছিলেন এক বৃদ্ধ। মেশিনে কার্ড ঢুকিয়েছিলেন, পিনও দিয়েছিলেন। তার পরেই হঠাৎ কালো হয়ে গেল এটিএমের স্ক্রিন। বাইরে অপেক্ষায় থাকা দুই যুবকের তাড়ায় কার্ড বার করে নিয়ে কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলেন ওই বৃদ্ধ। বেরিয়ে কয়েক পা এগোতেই এসএমএস এল তাঁর মোবাইলে। তাতে লেখা, কিছু ক্ষণ আগেই তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ১৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে!

পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ সন্ধ্যাবাজারের এটিএমে প্রতারিত ওই বৃদ্ধের নাম দিলীপ মজুমদার। তিনি গরফার ঝিল রোডের বাসিন্দা। সার্ভে পার্ক থানায় তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হলেও অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি।

কয়েক দিন আগেই মধ্যমগ্রামে ইউকো ব্যাঙ্কের একটি এটিএম কাউন্টার থেকে জালিয়াতি করে বহু গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতেরা। সেই ঘটনাতেও পুলিশ এখনও কোনও অভিযুক্তের সন্ধান পায়নি। পুলিশি সূত্রের দাবি, এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের যে-এটিএমে জালিয়াতি হয়েছে, সেই কাউন্টারে কোনও রক্ষী বা সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মেশিনের বোতামে আঠা লাগিয়ে আগে থেকেই কারচুপি করা হয়েছিল। তার ফলেই পিন দেওয়া মাত্র মেশিনটি সাময়িক ভাবে বিকল হয়ে যায়। এটিএম কার্ডের আসল মালিক কার্ড নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে জালিয়াতেরা বোতাম থেকে আঠা তুলে দেয়। তার ফলে ফের মেশিনটি চালু হয় এবং ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট খুলে যায়। ফলে টাকা তুলতে সমস্যা হয়নি জালিয়াতদের।

এ দিনের প্রতারণার কথা শোনার পরেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে উঠে এসেছে ‘গয়া গ্যাং’-এর নাম। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বছর কয়েক আগে গয়ার এক দল দুষ্কৃতী এই কায়দাতেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এটিএম থেকে টাকা গায়েব করে দিচ্ছিল। এটিএম মেশিনে সফ্‌টওয়্যারের একটি ত্রুটিকে কাজে লাগিয়েই এই কায়দা বার করেছিল তারা। অবশেষে লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা তদন্তে নেমে গয়া থেকে কিছু দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেন। তার পরেই ওই দুষ্কৃতীদের নাম দেওয়া হয় ‘গয়া গ্যাং’। সেই অভিযুক্তদের অনেকেই এখনও জেলে। লাগাতার ধরপাকড়ের পরে মহানগর থেকে এই কায়দায় জালিয়াতি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার একাংশ।

পুলিশি সূত্রের দাবি, গয়া গ্যাংয়ের তদন্ত চলাকালীন কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম মেশিনে সফ্‌টওয়্যারের কয়েকটি গাফিলতি ধরা পড়েছিল। সেগুলি শুধরে নেওয়ার জন্য গোয়েন্দারা একাধিক বার ব্যাঙ্ককর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন। প্রতিটি এটিএম কাউন্টারে সিসিটিভি ও নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে বলা হয়েছিল। মধ্যমগ্রাম ও সার্ভে পার্কের ঘটনার পরে এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘বারবার বলা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের তরফে সব এটিএম কাউন্টারের নিরাপত্তা যে বাড়ানো হয়নি, সেটা পরিষ্কার।’’

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

তথ্য জেনে নিয়ে ফের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি

এটিএম জালিয়াতিতে ঝাড়খণ্ডের চক্রের হদিশ

লক্ষ টাকায় এটিএম জালিয়াতি শিখছে ‘ছাত্র’রা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE