দুর্ঘটনার পরে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই অটো। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
সল্টলেকের সিটি সেন্টার মোড়ে বাসের ধাক্কায় উড়ে গিয়ে আছড়ে পড়ল একটি অটো।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। যাঁরা সেই সময়ে কাছাকাছি ছিলেন, তাঁদের বয়ান অনুযায়ী, বাসের ধাক্কার পরেই অটোর ছাদ ফুঁড়ে ছিটকে বেরিয়ে যান অটোচালক। কয়েকটি পাক খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে পড়ে অটো। যে চার জন যাত্রী ছিলেন, তাঁরা রাস্তার বিভিন্ন প্রান্তে ছিটকে পড়েন।
হাসপাতালের পথে মারা যান অটোচালক শম্ভু নস্কর (৩৫)। দুপুরের পরে ইস্টার্ন বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৮) নামে এক যাত্রীর। বাকি তিন যাত্রীর আঘাতও গুরুতর। তাঁরাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে দুপুরে ঘাতক বাসটিকে নিউ টাউন থেকে আটক করে পুলিশ। তবে চালককে ধরা যায়নি। ওই বাসচালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এর ফলে চালক গ্রেফতার হলেও সহজে জামিন পাবেন না।
পুলিশ জানিয়েছে, অটোটি ছিল উল্টোডাঙা-করুণাময়ী রুটের। ২১৫এ/১ রুটের একটি বাস ধাক্কা মারে সেটিকে। দুর্ঘটনার পরে আহত শম্ভুকে স্থানীয় রিকশাচালকেরা রিকশায় চাপিয়ে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, কেষ্টপুরের বাসিন্দা শম্ভুকে যখন হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনই তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। হাসপাতালের ভিতরে তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানিয়ে দেন ডাক্তারেরা। পরে হাসপাতালের বাইরে শম্ভুর স্ত্রী সুমি নস্কর কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘বাড়ির একমাত্র রোজগারের লোকটাই চলে গেল।’’ শম্ভুর চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
অটোর চার যাত্রীর মধ্যে মিলনী নন্দী ও সুশ্রী অধিকারীকে দুর্ঘটনাস্থলের সামনেই একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ও আশিস মিত্রকে নেওয়া হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল প্রাথমিক ভাবে জানায়, অরিন্দমের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁর মস্তিষ্কে বড় আঘাত লেগেছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। শরীরের বিভিন্ন হাড়ও ভেঙে গিয়েছিল। দুপুরের পর থেকেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় বলে জানান হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় তিনি মারা যান বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, অটোর সামনের সিটে চালকের বাঁ দিকে বসেছিলেন অরিন্দম। পাঁচ নম্বর সেক্টরে চাকরি করতেন তিনি। উত্তর কলকাতার কাশীপুরে তাঁর বাড়ি। হাসপাতালে এক বন্ধু বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়ে এইমাত্র পৌঁছেছি।’’
ওই হাসপাতালেই ভর্তি আশিসের মাথায়, পাঁজরে, হাতে এবং পায়ে আঘাত লেগেছে। সিটি স্ক্যানও করতে হয় তাঁর। তবে তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন বলেই হাসপাতাল জানিয়েছে। সল্টলেকের নার্সিংহোমটি জানিয়েছে, সেখানে ভর্তি দুই মহিলা মিলনী ও সুশ্রীরও এ দিন অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। মিলনীর বাড়ি সিঁথিতে। সুশ্রী থাকেন বরাহনগরে। দু’জনেরই মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। সুশ্রীর বাবা অলোক কুণ্ডু বলেন, ‘‘সকালে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিস যাচ্ছিল সুশ্রী। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনার খবর পাই।’’
দুর্ঘটনায় মৃত শম্ভু নস্কর (বাঁ দিকে) ও অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকাশ ভবনের দিক থেকে আসা বাসটি সিটি সেন্টারের সামনের আইল্যান্ড দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে বেরোনোর চেষ্টা করছিল। একই ভাবে অটোটি গোর্খা ভবনের সামনে দিয়ে বিধাননগরের পুরভবনের দিকে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পরে বাসটি বেপরোয়া গতিতে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালায়। দুপুরে সেটি নিউ টাউন থেকে ধরাও পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুর্ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন সেই মোড়ে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না। সিটি সেন্টার আইল্যান্ডের দু’দিকে শুধু দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। সূত্রের খবর, ওই মোড়ের সিগন্যাল ব্যবস্থাটি বেশ কয়েক দিন ধরে খারাপ। সিগন্যাল চালালেই একসঙ্গে সবুজ-লাল-হলুদ আলো জ্বলে যাচ্ছিল। কিন্তু, সেটি না চালালে সারা দিন ধরে হলুদ আলো জ্বলা-নেভা করছিল। এ দিন দুর্ঘটনার সময়ে প্রতিটি কোনায় হলুদ আলো জ্বলছিল-নিভছিল।
সমগ্র ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে সিটি সেন্টার চত্বরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে। নজরদারির অভাব, চালকদের নিয়ম না মানার প্রবণতা আর রাস্তা জুড়ে পার্কিং। এত বড় এক দুর্ঘটনার পরেও এ দিন দুপুরে পুলিশের সামনেই ফের ওই জায়গাতেই ট্রাফিক আইন ভেঙে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল করতে দেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy