Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Organ Donation

সচেতনতাই সহজ করে দিল ছাত্রের অঙ্গদান

এসএসকেএম সূত্রের খবর, সোমবার সুজয়ের হৃৎপিণ্ড পেয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন কেষ্টপুরের বাসিন্দা অমল হালদার (৪৭)।

সুজয় কর্মকারের (বাঁ দিকে) হৃৎপিণ্ড নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিস্থাপনের জন্য। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

সুজয় কর্মকারের (বাঁ দিকে) হৃৎপিণ্ড নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিস্থাপনের জন্য। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৫
Share: Save:

কুড়ি বছরের কলেজছাত্রের মৃত্যুর খবর জানানোই কষ্টকর। এর পরে পরিবারের সদস্যদের অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে সব সময়ে বিড়ম্বনার সুতোর উপর দিয়ে হাঁটেন কাউন্সেলরেরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ বছরের দ্বিতীয় অঙ্গদানের ক্ষেত্রে সেই কাজ সহজ করে দিল মৃতের দিদির সচেতন মন। ভাইয়ের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা হওয়ার পরে তিনি পরিবারের সম্মতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন। দিদি দীপান্বিতা কর্মকারের হাত ধরে এক থেকে বহু হলেন নদিয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা সুজয় কর্মকার (২০)।

Advertisement

এসএসকেএম সূত্রের খবর, সোমবার সুজয়ের হৃৎপিণ্ড পেয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন কেষ্টপুরের বাসিন্দা অমল হালদার (৪৭)। লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে অ্যাপোলো গ্লেনেগল্‌সে ভর্তি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন হালদার নামে এক ব্যক্তির শরীরে। দু’টি কিডনি এসএসকেএমের রোগীরাই পেয়েছেন। তাঁরা হলেন বনগাঁর বাসিন্দা সাদ্দাম মণ্ডল (২৯) ও হাওড়ার বাসিন্দা সুস্মিতা ভট্টাচার্য (৩৩)।

গত ৭ জানুয়ারি সুজয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। বন্ধুর বাইকে চড়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কল্যাণীর শহিদপল্লি থেকে রওনা হন তিনি। জাগুলিয়ার কাছে মালবাহী গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হন ওই ছাত্র। তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। রবিবার দুপুরে তরুণের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

গত সপ্তাহেই প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বপন হাজরার পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সেই সচেতনতা যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করলেন দীপান্বিতা। সুজয়ের যখন দেড় বছর বয়স, তখন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর বাবা সুখরঞ্জন কর্মকারের। বাড়িতে প্রৌঢ়া মা মায়া কর্মকার অসুস্থ। এই পরিস্থিতিতে মামাতো দাদা, সুজয়ের ভাই সুদেব কর্মকারের সঙ্গে কথা বলেন দীপান্বিতা। পরিবারের বাকি সদস্যদেরও তিনিই রাজি করান। সোমবার ভাইয়ের অঙ্গ যখন প্রতিস্থাপনের জন্য রওনা হচ্ছে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাক্ষী থেকেছেন দীপান্বিতা। প্রাণীবিদ্যার ছাত্রীটির কথায়, ‘‘কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেকে অঙ্গদান করতে চান না। দেহ পোড়ার পরে কোনও কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। তার চেয়ে ভাই আরও চার জনের মধ্যে বেঁচে রইল, এর থেকে ভাল কী হতে পারে!’’

Advertisement

অঙ্গদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এসএসকেএমের এক চিকিৎসক জানান, সম্প্রতি একটি পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়নি। সে দিক থেকে স্বপন হাজরার পরিবারের পরে সুজয়ের দিদি যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তা প্রশংসনীয়।

কেষ্টপুরের বাসিন্দা, পেশায় কাঠমিস্ত্রি অমল হালদার সাত মাস ধরে হৃৎপিণ্ডের অপেক্ষায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। এ দিন তাঁর দাদা প্রিয়লাল হালদার জানান, ভাইয়ের এক মেয়ে রয়েছে। বাবার অবস্থা দেখে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন স্নাতক স্তরের সেই ছাত্রী অর্পিতা হালদার। প্রিয়লালের কথায়, ‘‘তরুণের পরিবারের সিদ্ধান্তে আমাদের মতো বাকি পরিবারগুলিও উপকৃত হল।’’

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে সকলেরই অবস্থাই আপাতত স্থিতিশীল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.