পরোয়াহীন: শ্যামবাজার পুরনো মার্কেটে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও জানা নেই ব্যবহার বিধি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সোমবার সকাল থেকেই অগ্নি-নির্বাপক নিয়ে প্রবল তৎপরতা শ্যামবাজার পুরনো মার্কেটে। গত শনিবারই বাজারের ১৫টি অগ্নি-নির্বাপকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাগড়ি মার্কেট বিপর্যয়ের পরে দ্রুত সেগুলি বদলাতে চান ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যেরা।
দিনভর লম্ফঝম্ফের পরে শ্যামবাজার মার্কেট কমন ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক সুকুমার রায় বললেন, ‘‘সব আজই বদলে ফেলব। কাউকে বিপদে ফেলা যাবে না।’’ এগুলি কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় জানা আছে? হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বারকয়েক ঢোক গিলে সুকুমারবাবু বললেন, ‘‘এখন জানি না। আগুন লাগলে তখন শিখে নেবো!’’
শহর কলকাতার বাজারগুলি ঘুরে দেখা গেল, অগ্নি-নির্বাপণের পাঠ একরকম না জেনেই দিন কাটছে ব্যবসায়ীদের। প্রায় প্রতিটি বাজারেই অগ্নিকাণ্ডের পরে কমবেশি অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে বিপদে পড়লে সেগুলি কী ভাবে কাজে লাগাতে হবে তা জানেন না প্রায় কেউই। বাজার সংগঠনগুলি এর দায় দমকলের উপরে চাপাল। তাদের বক্তব্য, আগে বছরে একবার করে দমকল অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে যেত। এখন সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরসভারও এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেই। সব মিলিয়ে বিপদকালীন বন্দোবস্ত না জেনেই দিন কাটছে বাজারকর্মীদের।
মানিকতলা
হাতিবাগান বাজারে অগ্নি-নির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। ২০১২ সালে ভয়াবহ আগুন লাগার পরে বাজার দফতরের তৎকালীন মেয়র পারিষদ তারক সিংহ গভীর নলকূপ বসানোর কথা বলেছিলেন। নলকূপ বসানো হলেও প্রয়োজনের সময়ে জল তুলে ব্যবহার করার পাইপ বসানো যায়নি গত ছ’বছরেও। তারকবাবু বলেন, ‘‘এই নলকূপের মাধ্যমে জল তুলে সাড়ে তিন মিনিটে দমকলের গাড়ি ভরে ফেলা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দফতরের মধ্যে চাপানউতোরের জন্য পাইপই বসানো যায়নি।’’
হাতিবাগান বাজারে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পড়ে অবহেলায়।
এর মধ্যেই এ দিন গিয়ে দেখা গেল, বাজারের ৭০টি অগ্নি-নির্বাপকের বেশ কয়েকটির মেয়াদ উত্তীর্ণ। যেগুলির মেয়াদ রয়েছে তার ব্যবহারও জানেন না প্রায় কেউই। হাতিবাগান বাজার মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জন রায় বলেন, ‘‘দমকল গত দেড় বছরে আর মেয়াদ দেখতে আসেনি। আমাদের কেউ কেউ ওগুলির ব্যবহার জানে। আমরাও শেখার চেষ্টা করছি।’’ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও অগ্নি-নির্বাপক না বদলানোর দায় তিনি বাজারের অন্য একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের উপরে চাপালেন।
আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে খোঁজ সান্ত্বনার
উল্টোডাঙা নতুন বাজার এবং মানিকতলা পুরনো বাজারেও দেখা গেল একই সমস্যা। বাজার জুড়ে বেশ কিছু অগ্নি-নির্বাপক লাগিয়ে অগ্নি-নির্বাপণের যাবতীয় দায় শেষ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনের সময়ে তা ব্যবহার করার লোক নেই। মানিকতলা বাজারে অগ্নি-নির্বাপণের জন্য মজুত করা বালতিতে আবার বালির বদলে ময়লা জল দেখা গেল। মানিকতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাবলু দাস বলেন, ‘‘কেউ দেখার নেই। বালি থাকবে কী করে?’’ এরই মধ্যে মন্দের ভাল শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেট। ২০১৩ সালে আগুন লেগে ১৯ জনের মৃত্যুর পরে ছ’তলা মার্কেট জুড়ে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। পাইপ লাগিয়ে সর্বত্র জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও চলতি বছরে দমকলের থেকে সেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার ‘ফিট রিপোর্ট’ পেতেই কালঘাম ছুটছে সূর্য সেন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেটিভ সোসাইটির। ফলে ব্যবস্থা থাকলেও তা কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সোসাইটির সম্পাদক শিবপদ ঘোষ বললেন, ‘‘ব্রিজ ভাঙছে, আগুন লাগছে। দমকলের সঙ্গে দেখাই করা যাচ্ছে না। আমরা চলতি বছরের ছাড়পত্রই পাচ্ছি না।’’
ছাড়পত্র না মেলায় অকেজো হয়ে পড়ে সূর্য সেন মার্কেটের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা
ভয়ঙ্কর অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন যদুবাবুর বাজারের। দিনভর ঘুরেও সেখানে কোনও অগ্নি নির্বাপকের দেখা মিলল না। তারের জটে দমবন্ধ বাজারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে চৌবাচ্চায় মজুত করা জল। ঘটনাচক্রে এ দিনই যদুবাবুর বাজার সংলগ্ন মিষ্টির দোকানের কারখানায় আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়ায়। যদুবাবু বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ভানু বিশ্বাস বললেন, ‘‘যতটা সম্ভব বাজার ভাল রাখার চেষ্টা করি আমরা। অগ্নি-নির্বাপক ছিল, কয়েকটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া সেগুলির ব্যবহার কেউ না শেখালে শিখব কী করে?’’
দমকলের ডিজি জগমোহন অবশ্য দমকলের গাফিলতি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দমকল বারবার বাজার কমিটিগুলিকে সতর্ক করেছে। একাধিক বার অগ্নি-নির্বাপণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও সতর্ক না হলে কিছু করার নেই।’’ দমকলের তো অভিযোগ করার অধিকার রয়েছে। তা করা হয়নি কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর দেননি বর্তমানে বাগড়ি মার্কেটে অগ্নি-নির্বাপণে ব্যস্ত জগমোহন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy