Advertisement
E-Paper

কাউন্সিলরের ‘বাধা’য় বাতিল রক্তদান শিবির

সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী বলছেন, ‘‘এ রকম অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি।’’ হাসপাতালের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এর ফলে রক্তদান আন্দোলন ধাক্কা খাবে।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫৯
Share
Save

সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী বলছেন, ‘‘এ রকম অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি।’’ হাসপাতালের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এর ফলে রক্তদান আন্দোলন ধাক্কা খাবে।’’

রবিবার সকালে দক্ষিণ দমদমের মতিঝিলে যা ঘটেছে, তা শুনে কার্যত সকলেই হতবাক। সেখানকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, উদ্যোক্তারা জনপ্রতিনিধির পছন্দের তালিকায় না থাকায় ‘ছেলে পাঠিয়ে’ তাঁদের রক্তদান শিবির বানচাল করে দিয়েছেন তিনি। যার জেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও ফিরে যেতে বাধ্য হন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা।

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের জন্য গত বছরের মতো এ বারও মতিঝিলের চারুভিলা ফার্স্ট বাইলেনে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার অন্যতম সদস্য শুভব্রত দত্ত জানান, রবিবার ওই শিবির করার জন্য মাসখানেক আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, শিবিরের এক দিন আগে ডেকরেটর্সের লোকজন প্যান্ডেল বাঁধার কাজ শুরু করতেই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুরজিৎ রায়চৌধুরী প্রায় ২০-২৫ জন যুবককে পাঠিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। শুভব্রতের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এমনই হয় যে, ডেকরেটর্সের এক কর্মী হেলমেট ফেলে পালিয়ে যান।’’ উদ্যোক্তাদের দাবি, শনিবার বিকেল পর্যন্ত দমদমের একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে কথা বলে শিবির নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি।

রবিবার সকালে হাজির হন ন্যাশনাল মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। ওই শিবিরে ৭০ জনের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল। মতিঝিলের শিবির থেকে ৪৮টি ট্রিপল ব্যাগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, আয়োজনের কোনও চিহ্ন নেই! উদ্যোক্তাদের কাছে সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে ওই শিবিরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁরা কয়েক জন বন্ধু মিলে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুলেছেন। তাঁদের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। শিবিরের জন্য আমন্ত্রণপত্রেও রাজনীতির ছাপ ছিল না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। শেষ পর্যন্ত কী কারণে শিবির হল না, তা উদ্যোক্তাদের লিখে দিতে বলেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। যার প্রেক্ষিতে যে কাগজে শিবিরের জন্য আবেদন করা হয়েছিল, সেখানেই উদ্যোক্তারা লিখে দেন, ‘ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প অর্গানাইজ করার জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে সমস্ত কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু লোকাল পলিটিক্যাল পার্টি এবং জনপ্রতিনিধির বাধার জন্য আমরা শিবির করতে পারিনি’।

শিবির কেন হতে পারেনি, এ ভাবে লিখে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। নিজস্ব চিত্র

এই বয়ান কেন লিখতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, গরমের সময়ে প্রতি বছরই রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। তার উপরে ভোটের কারণে এ বছর শিবিরের সংখ্যা কমবে। এ নিয়ে বারবার ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য ভবন। এ রকম পরিস্থিতিতে ৭০ জন রক্তদাতার ফিরে যাওয়াটা চরম দুর্ভাগ্যজনক। ন্যাশনাল মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা বা উদ্যোক্তাদের কেউ মারা যাওয়ায় শিবির হয়নি, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু দমদমের মতো অভিজ্ঞতা কোথাও হয়নি! আগে থেকে জানলে আমাদের কর্মীদের অন্যত্র কাজে লাগাতে পারতাম। একটা রবিবার শিবির না হওয়ায় যে কতখানি সঙ্কট তৈরি হল, তা তো কারও বোধগম্য হল না!’’

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর সুরজিৎ বলেন, ‘‘কোনও আয়োজনই হয়নি। প্যান্ডেল, ব্যানার কিছু ছিল না। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাও আসেননি!’’

শিবির বাতিলের কথা স্বীকার করেছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর মধুসূদন মণ্ডল। আর ন্যাশনালের সুপার সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

TMC South Dumdum Blood Donation Camp

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}