Advertisement
E-Paper

পুজোয় পাওয়া সাইকেল নিয়ে গাড়ির তলায়

নতুন জামাকাপড় বা জুতো নয়। পুজোয় চাই নতুন সাইকেল। ঝুলোঝুলি বায়না ধরেছিল আট বছরের সৌমিক সাউ। হুট বলতে ছেলের আবদার মেটানোর সামর্থ্য ছিল না। তবু পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে বলে বচ্ছরকার উৎসবে ছেলেকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার আড়িয়াদহ রামকৃষ্ণ পল্লির সন্তোষ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৫

নতুন জামাকাপড় বা জুতো নয়। পুজোয় চাই নতুন সাইকেল। ঝুলোঝুলি বায়না ধরেছিল আট বছরের সৌমিক সাউ। হুট বলতে ছেলের আবদার মেটানোর সামর্থ্য ছিল না। তবু পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে বলে বচ্ছরকার উৎসবে ছেলেকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার আড়িয়াদহ রামকৃষ্ণ পল্লির সন্তোষ সাউ।

সপ্তমীর সকালে সেই সাইকেলে দিদিকে চাপিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিল সন্তোষবাবুর আট বছরের ছেলে সৌমিক। পিছন থেকে দমকলের গাড়ির ঘণ্টা শুনে রাস্তার ধারে সরে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একটা রিকশা পাশে চলে আসায় শেষ মুহূর্তে আর সামাল দিতে পারেনি সৌমিক। পড়ে যায় রাস্তায়। সঙ্গে সঙ্গে দমকলের গাড়িটির চাকার নীচে পড়ে যায় সৌমিক আর তার দিদি পায়েল। লোকজন ছুটে এসে দু’জনকেই নিয়ে যান এলাকার একটি নার্সিংহোমে। সেখানে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে পায়েল। কিন্তু সৌমিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাড়ির চাকায় তার ডান পা পিষে গিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে ফিডার রোডে রামানন্দ হিন্দু স্কুলের সামনে। সকালে ওই এলাকাতেই এ সি পাল স্ট্রিটে সিইএসসি-র একটি ফিডার বক্সে আগুন লেগেছিল। সাড়ে ১০টা নাগাদ দমকলের একটি গাড়ি আগুন নিভিয়ে ফিরে আসার পরে আরও একটি গাড়ি সেখানে যায়। আগুন নিভে গিয়েছে দেখে দ্বিতীয় গাড়িটিও কামারহাটি দমকল কেন্দ্রের দিকে ফিরছিল। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জনতা। আহত দুই ভাইবোনকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা খারাপ হতে থাকায় সৌমিককে পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।

কামারহাটি দমকল কেন্দ্রের ফায়ার অফিসার বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কয়েক জন দমকলকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালে যান। চিকিৎসক প্রায় তিন ঘণ্টা পরে সৌমিককে দেখেন বলে তার পরিবারের অভিযোগ। বিশ্বজিৎবাবুরাই রক্তের ব্যবস্থা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সৌমিকের অবস্থা স্থিতিশীল না-হলে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচার হলেও ডান পা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। ওই পায়ের অনেকটাই থেঁতলে গিয়েছে।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওর বয়সি একটা ছেলে আছে আমারও। তাই আমাদের গাড়িতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আর বসে থাকতে পারিনি। আমাদের তো আর ছুটি নেই। ছেলেটাকে বলেছিলাম, আজ ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাব। কিন্তু এই ছেলেটার কথা ভেবে পারলাম না। ওর জ্ঞান না-ফেরা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকব।’’

হাসপাতালে দিশাহারার মতো ছোটাছুটি করছিলেন সন্তোষবাবু। ছেলের চিকিৎসার জন্য কোথায় কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, কী করতে হবে, কিছুই জানা নেই। টাকাপয়সাও বিশেষ নেই। ডাক্তার বা নার্সদের দেখলেই বলছেন, ‘‘আচ্ছা, ও বাঁচবে তো? ওকে শুধু বাঁচিয়ে দিন। আর সাইকেল চালাতে দেব না।’’

accident brother sister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy