নিষিদ্ধ শব্দবাজির সম্ভার। ফাইল চিত্র।
দীপাবলির শব্দবাজি যতটা বিক্রি হওয়ার, তা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটি-নুঙ্গিতে তৈরি চকলেট বোমা মাস দুই আগেই পাচার হয়ে গিয়েছে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে, দাবি অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের। এ দিকে, এ বছর দীপাবলিতে মাত্র দু’ঘণ্টা বাজি ফাটানোর অনুমতি দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তবে তো কমার কথা বিক্রি। ভাটার টান কি এলাকায়? কোর্টের নির্দেশ নিয়ে কার্যত কোনও হেলদোল নেই চম্পাহাটি-নুঙ্গির বাজি ব্যবসায়ী মহলে। তাঁদের বক্তব্য, এ বছরের ব্যবসা হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজোর আগেই।
আদালতের নির্দেশের পরে ব্যবসায়ীদের পরিস্থিতি বুঝতে এক দিন সাতসকালেই হাজির হওয়া গিয়েছিল চম্পাহাটির বাজি বাজারে। সেখানে ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ বাজি ব্যবসায়ীই নির্বিকার। দিন সাতেক আগে থেকেই চম্পাহাটির রাস্তার ধারে দোকান খোলা হয়েছে। সর্বত্রই সাজানো আতসবাজির পসরা। সূত্রের খবর, তারই আড়ালে চুপি চুপি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে চকলেট বোমার প্যাকেটও। পাশাপাশি রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে শিবকাশির বিশেষ ধরনের আতসবাজি ‘শেল’। ওই এলাকার এক বাজি কারিগরের কথায়, ‘‘আমাদের এখানেও রংমশাল, চরকি, তুবড়ি, ফুলঝুরি তৈরি করা হয়। তবে তা শিবকাশির গুণমানের ধারকাছেও আসে না। কিন্তু শিবকাশির বাজির অনেক দাম। আমরা কম দামে আতসবাজি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিই। তাই এখানে কলকাতা-সহ নানা এলাকা থেকে বাজি নিতে আসেন ক্রেতারা।’’ আর এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘দাদা এখানে আতসবাজি নয়, মূলত চকলেট বোমা-আলু বোমা-দোদোমা নিতেই আসেন ক্রেতারা। আতসবাজির আড়ালে ওই সবও নিয়ে যায়।’’
সম্প্রতি সোনারপুরের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতি সক্রিয় পুলিশ। বাজি বাজারের চারদিকে নানা সময়ে টহলদারি ভ্যান এসে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ক্রেতাদের বাজির ব্যাগেও হচ্ছে তল্লাশি। জিআরপি-র তরফে ট্রেনেও বাজি ক্রেতাদের ব্যাগে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। চম্পাহাটি এলাকার এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে অধিকাংশ পুরোনো ক্রেতা। সকলের মোবাইল নম্বর আমাদের কাছে আছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিচ্ছেন ওঁরা। দাদা, চকলেট কি আর দোকান থেকে বিক্রি হয়! যেখানে পৌঁছানোর, সোজা সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্রেতারাও ফোন করে আমাদের ছেলেদের ডেকে নেন। মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয়।’’
এ বার চকলেটের দাম কত? ওই ব্যবসায়ী জানান, ভাল চকলেটের ১০০ পিসের প্যাকেট ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বাজি বাজারের ভিতরের নানা বাড়িতেই মজুত করা আছে চকলেট বোমা ভর্তি সেই সব প্যাকেট। বিক্রিও হচ্ছে সেখান থেকেই। বাজি বাজারের অন্দরমহল থেকে জানা গেল, আতসবাজির সব দোকানের আশপাশেই রয়েছে ছেলে-ছোকরার দল। চোখের চাউনি বুঝে পাশে এসে দাঁড়াবে তারাই। সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ‘চকলেট’ কিনিয়ে দেবে। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুটা টাকা আর ক্রেতার হাতে চকলেট বোমা তুলে দেওয়ার পরে ১০ টাকা চেয়ে নেবে। অর্থাৎ, বাজির বাজারের পথ ছেড়ে একটু এ দিক-ও দিক গেলে অনায়াসেই ক্রেতার হাতে চলে আসছে যথেচ্ছ শব্দবাজি। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই বাজারে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। ৬০ কেজি-র বেশি চকলেট বোমা বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। চকলেট বোমা বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে জনা দশেক।’’ তবে চোর-পুলিশের এই খেলার ফাঁক গলেই চকলেট বোমা যেখানে যাওয়ার, সেখানেই চলে গিয়েছে বলে দাবি করছেন ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু এত বাজির হবে কী? সর্বোচ্চ আদালতের যে নির্দেশ, মাত্র দু’ঘণ্টা ফাটবে বাজি! এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রতি বছর যেমন এলাকা কাঁপিয়ে চকলেট ফাটে, দেখবেন এ বারও সে রকমই ফাটবে। যদি আমার কথা মিথ্যা হয়, এই ব্যবসা ছেড়ে দেব। কথা দিলাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy