বদলির নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে হাওড়ার জগাছার জিআইপি কলোনির সাতাশি হাইস্কুলের সাত জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে আচমকা বদলি করে স্কুল শিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশ পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ‘রিলিজ অর্ডার’ও দিয়েছেন। বদলির নির্দেশ এবং রিলিজ অর্ডারের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের বদলির সংশোধিত আইন সংবিধান বিরোধী বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন তাঁদের মধ্যে তিন শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মী। শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বদলির নির্দেশ ও রিলিজ অর্ডারের উপরে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, মামলার আবেদনকারীদের বকেয়া বেতন স্কুল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মামলাকারী ওই চার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর আইনজীবী এক্রামুল বারি শনিবার জানান, বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য পাওনার আবেদন জানিয়ে তাঁর মক্কেলরা আগেই আদালতে মামলা করেছেন। মামলা করার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতর গত ৪ জুন সাত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে বদলি করে। সেই নির্দেশ পেয়ে তড়িঘড়ি সাত জনকে রিলিজ অর্ডার ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার মামলার শুনানিতে এক্রামুল আদালতে জানান, স্কুল শিক্ষা দফতর স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৭ সালের নতুন সংশোধিত আইন (১০ সি) অনুযায়ী বদলি করেছে। কিন্তু ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তখন নিয়োগপত্রে বদলির উল্লেখ ছিল না। তাই ৪ জুনের বদলির নির্দেশ আইনসম্মত নয়। আইনজীবী আরও জানান, লকডাউনে রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, “কী এমন কারণ রয়েছে, যে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বদলির নির্দেশ বেরোনোর দু’দিনের মধ্যেই সাত জনকে রিলিজ অর্ডার দিলেন?”
এক্রামুলের যুক্তি, আগে নিয়ম ছিল, শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরা জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষা দফতরের কাছে বদলির আবেদন করতে পারেন বা অন্য স্কুলের কারও সঙ্গে সমঝোতা করে বদলি নিতে পারেন। সেই নিয়মের বদল ঘটেনি। অথচ স্কুল শিক্ষা দফতর এবং সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি বদলির নির্দেশ ও রিলিজ অর্ডার দিয়ে প্রশাসনিক কারণের তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছেন। তিনি আদালতে অভিযোগ করেন, সাতাশি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বর্ধিত বেতন ও পাওনা চেয়ে আদালতে মামলা করার জন্যই এই বদলি। কারণ, ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি রাজ্যের শাসকদলের এক মন্ত্রী।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আদালতে জানান, বদলির সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক। তাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। তা ছাড়া বদলি চাকরির অঙ্গ। সেই কারণে মামলাটি ধোপে টেকে না। এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করার কোনও প্রয়োজন নেই।
স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, সাতাশি হাইস্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা উদ্বৃত্ত। যে স্কুলে তাঁদের বদলি করা হয়েছে সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর আসন ফাঁকা রয়েছে। যা শুনে আইনজীবী এক্রামুলের পাল্টা দাবি, যদি উদ্বৃত্ত থেকেই থাকে তা হলে তার প্রামাণ্য নথি স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতে পেশ করুন।
তাঁদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি ভট্টাচার্য পর্যবেক্ষণ করেন, বদলি প্রশাসনিক ইচ্ছার উপরে হতে পারে না। সমঝোতা বা কোনও প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে হতে পারে। তিনি নির্দেশ দেন, রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্য দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাবেন। পাল্টা হলফনামা এক সপ্তাহের মধ্যে পেশ করতে হবে মামলার আবেদনকারীদের। তিন সপ্তাহ পরে পরবর্তী শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy