Advertisement
০২ মে ২০২৪

শতাব্দী-প্রাচীন ছাত্রাবাস এখন দুষ্কৃতীদের ঠেক

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১৯১৮ সালে কলেজের পাশে প্রায় এক বিঘারও বেশি জমিতে তৈরি হয় এই ছাত্রাবাসটি। কিন্তু কোনও কারণে গত ১৫ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ছাত্রাবাসটি।

সিটি কলেজের পাশে এই হস্টেলেই ফাটে বোমা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সিটি কলেজের পাশে এই হস্টেলেই ফাটে বোমা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুপ্রিয় তরফদার ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

বাড়ির বয়স পেরিয়েছে একশো। কিন্তু যত্ন নেই এতটুকু। ফলে ভেঙে পড়েছে দেওয়ালের একাংশ। বেরিয়ে এসেছে ইট। অথচ, এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পড়ুয়াদের অনেক স্মৃতি! যে ঘরগুলি ছিল তাঁদের স্বর্গ, সেগুলিই বর্তমানে পরিত্যক্ত। ক্রমে এই বাড়ি হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীদের আখড়া। রবিবার আমহার্স্ট স্ট্রিটে সিটি কলেজের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ভিতরে বোমা ফেটে দুই কিশোর আহত হওয়ার পরে এমনই নানা অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১৯১৮ সালে কলেজের পাশে প্রায় এক বিঘারও বেশি জমিতে তৈরি হয় এই ছাত্রাবাসটি। চারতলা ছাত্রাবাসের ভিতরে খেলার মাঠ রয়েছে, যা বর্তমানে অনেক স্কুলেও অমিল। কলকাতায় যেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা থাকার জায়গা পাচ্ছেন না, সেখানে হাতের কাছে এমন একটি ছাত্রাবাস থাকা সত্ত্বেও কেন সেটিকে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে এ বার সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠনও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, সিটি কলেজের পাশাপাশি অন্য কলেজের পড়ুয়ারাও এই ছাত্রাবাসে থাকতেন। দূরবর্তী কিছু কিছু জেলার পড়ুয়ারাও বন্ধুদের সঙ্গে এখানে থেকে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু কোনও কারণে গত ১৫ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ছাত্রাবাসটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারাই মানছেন, তার পর থেকে এটি মেরামতির কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি। চূড়ান্ত অযত্নে দেওয়ালের একাংশ ভেঙে ইট বেরিয়ে বাড়িটি কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই এলাকার দুষ্কৃতীদের আস্তানা হয়ে ওঠে বাড়িটি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট-সদস্য তথা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান সুবোধ সরকার বলেন, ‘‘২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে সিদ্ধান্ত হয়, ছাত্রাবাসের জায়গাটি পুরোপুরি সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়া হবে। সেই দিক থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও বর্তায় কলেজের উপরে।’’ কিন্তু তার পরে চার বছর কেটে গেলেও ছাত্রাবাস সংস্কারের উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ খোদ বিশ্ববিদ্যালয়েরই। তা-ই দুষ্কৃতীদের প্রভাব বেড়েছে বলে তাঁদের মত।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীও। তিনি জানান, বহু পুরনো এই ছাত্রাবাসের মেরামতি অবশ্যই প্রয়োজন। তবে যেহেতু এটি সিটি কলেজের অধীনে, তাই প্রথমে কলেজ কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে। অসুবিধা হলে সিন্ডিকেটে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। রাজাগোপালবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রাবাসের জমিটি কার, কবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা আগে দেখতে হবে। তার পরে সংস্কারের সিদ্ধান্ত। তবে বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’’

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘শহরের হস্টেলগুলিতে পড়ুয়া উপচে পড়ছে। সেখানে এত বড় একটি হস্টেল কেন বন্ধ থাকবে? আমি কলেজ কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে আবেদন করব, সমস্ত জট কাটিয়ে যেন দ্রুত হস্টেল চালু করা হয়।’’ সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শীতলপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেনেটে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে বিষয়টি উচ্চশিক্ষা দফতরে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ না আসায় আমরা ছাত্রাবাস সংস্কার নিয়ে এগোতে পারিনি।’’

এ দিনের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কী ভাবে বোমা এল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে দুষ্কৃতীদের বিষয়টিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE