দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আসলামের কথায়, ‘‘সুধীরবাবু শহরে না পৌঁছলে মেডিক্যালে গিয়ে লাভ ছিল না। তাই সকাল ৭টা নাগাদ এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে যাই। কাউন্টারে মুখ বাড়িয়ে ডাকাডাকি করার পরে এক কর্মী বললেন, রেফার করার মতো এখন কেউ নেই! সাড়ে ৯টার পরে আসুন। সাড়ে ৯টার পরে যখন গেলাম, আবার বলা হল অপেক্ষা করতে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই খবর পেলাম, নাতি মারা গিয়েছে।’’ খবর পেয়ে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফিরে যান সুধীরবাবুও।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ঘটনার সময় ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে ছিলেন মেডিক্যাল অফিসার সুজিত ভট্টাচার্য। তাঁরই স্লিপে সই করে মেডিক্যালে ‘রেফার’ করার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো হাসপাতালেই ছিলাম। আমাকে তো কেউ বলেনি যে ওঁরা ৭টার সময়ে এসেছেন। ৯টার পরে ঘটনা জানা মাত্র স্লিপে লিখে দিই, আমাদের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নেই। অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে খোঁজ করা হোক।’’ সুজিতবাবু জানান, ওই সময়ে কাউন্টারে ছিলেন কর্মী সুশান্ত দাস। রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত উত্তর দেননি এসএমএসের।
ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর দিলীপ পাণ্ডা বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ খবর পাওয়া মাত্র দ্রুত রেফারের ব্যবস্থা করেছি। আরও আগে খবর পেলে ভাল হতো।’’ তাহলে অভিযোগের আঙুল ব্লাড ব্যাঙ্কের যে কর্মী ও চিকিৎসকের দিকে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় তৎপরতা প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে তৎপরতার যে অভাব ছিল সেই সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট সরকারিভাবে পাইনি। রিপোর্ট পেলে নিশ্চয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ বৃহস্পতিবার এই শিশুরই রক্তের ‘রিকুইজিশন স্লিপে’ বিভ্রান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গেও ‘খোঁজ নেওয়ার’ কথা বলেছিলেন সুপার। খোঁজ করে কী জানা গেল? সৌরভবাবু বলেন, ‘‘বিভাগীয় প্রধানের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, এই খোঁজ নেওয়া, পদক্ষেপ করার কথা আর কতদিন শুনতে হবে। এনআরএসে বম্বে গ্রুপের রক্তের একটি শিশু যে সঙ্কটজনক অবস্থায়, তা স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদেরও অজানা নয়। গত কয়েকদিন ধরে সদ্যোজাতের রক্তের প্রয়োজনে যেভাবে দৌড়ঝাঁপ হয়েছে, তাতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদেরও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকার কথা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সদ্যোজাত হার্সস্প্রাঙ্গ রোগে আক্রান্ত ছিল। শিশু চিকিৎসকেরা (পেডিয়াট্রিক সার্জারি) জানিয়েছেন, এই রোগে বৃহদন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জেরে মলত্যাগে অসুবিধা হয়। স্নায়ুর গন্ডগোলে সদ্যোজাতের দেহে এই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে এনআরএসে প্রথম অস্ত্রোপচারের পরে সেলাইয়ের জায়গা ফেটে গিয়েছিল। প্রয়োজন হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সদ্যোজাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
গত শনিবার সদ্যোজাতের প্রথম অস্ত্রোপচার করানোর আগে রক্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল এনআরএসের শিশুবিভাগ। ৩০ ঘণ্টা ধরে হয়রানির শেষে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় রক্তদাতার খোঁজ মেলে। নতুন করে সংকট তৈরি হয় বৃহস্পতিবার। ওই দিন বিকেলে সিঙ্গুর ও পাথরপ্রতিমায় দু’জন দাতার কথা জানা যায়। পাথরপ্রতিমার দাতা রক্ত দিতে রাজি হন। কিন্তু যে কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে তিনি রক্ত দেবেন না। অনেক বোঝানোর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে রক্ত দিতে তিনি রাজি হন। সেখান থেকে রক্তের উপাদান এনআরএসে আনানোর কথা ছিল। সইয়ের জন্য পরিবারের অপেক্ষার সময় ওই সংস্থাই ডিরেক্টরকে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানায়।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান, প্রফেসর প্রসূন ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিদেশে যাঁদের রক্তের গ্রুপ বিরল বা বিশেষ ধরনের কোনও অ্যান্টিবডি আছে বা বিরল রোগ রয়েছে তাঁদের হাতে একটি ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয়। অযথা যাতে সময় নষ্ট না হয়, সেজন্য আমাদের দেশেও তা অনুসরণ করা উচিত। একজনকে আমরা হারালাম। কিন্তু বারবার হারাব সেটাও কাম্য নয়।’’