Advertisement
১১ মে ২০২৪
school

ঠান্ডায় চাতালে বসিয়ে পড়া, ক্ষোভে ক্লাস বন্ধ প্রাথমিকের

কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে আশপাশ। হু হু করে বইছে ঠান্ডা হাওয়া। গায়ে সোয়েটার রাখলেও টুপি খুলে কাঁপতে কাঁপতে ক্লাস করছে কচিকাঁচারা।

খোলা আকাশের নীচে ক্লাস চলছে খুদেদের। সোমবার, বারাসতের একটি সরকার-পোষিত স্কুলে।

খোলা আকাশের নীচে ক্লাস চলছে খুদেদের। সোমবার, বারাসতের একটি সরকার-পোষিত স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৩
Share: Save:

শ্রেণিকক্ষ জোটেনি, তাই স্কুলের চাতালে বসেই চলছে লেখাপড়া। কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে আশপাশ। হু হু করে বইছে ঠান্ডা হাওয়া। গায়ে সোয়েটার রাখলেও টুপি খুলে কাঁপতে কাঁপতে ক্লাস করছে কচিকাঁচারা। সোমবার সন্তানদের ওই ভাবে ক্লাস করতে দেখে চেঁচামেচি জুড়ে দেন অভিভাবকেরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসাও বেধে যায় তাঁদের। শেষ পর্যন্ত সকাল ৯টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন বারাসতের ছোট বাজার এলাকার একটি সরকার-পোষিত স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে।

করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার পরে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি স্কুল খুলেছে সর্বত্র। অভিযোগ, তার পর থেকেই ঘরের অভাবে প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়াদের ঠান্ডার মধ্যে চাতালে বসিয়ে লেখাপড়া করানো হচ্ছে ওই স্কুলে। এ দিন সকালে কুয়াশাও পড়েছিল। সঙ্গে বইছিল ঠান্ডা হাওয়া। ক্লাস করতে করতে কাঁপছিল বাচ্চারা। যা দেখে অভিভাবকেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে।

তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়ার অভিভাবকের কথায়, ‘‘বাচ্চারা তো এ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। ক্লাসরুমের সংখ্যা নিয়ে স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগের মধ্যে সমস্যা চলছে। অথচ, ভুগছে আমাদের বাচ্চারা।’’ অভিভাবকদের দাবি, তাঁরা প্রাথমিকের টিচার ইন-চার্জকে গত কয়েক দিন ধরেই সমস্যার কথা জানাচ্ছিলেন। এক অভিভাবকের দাবি, ‘‘টিচার ইন-চার্জ আমাদের জানান, বড়দের বিভাগ প্রাথমিকের জন্য ঘর দিচ্ছে না। তাই পড়ুয়াদের স্কুলের ভিতরে বসানো যাচ্ছে না। করোনার আগে বাচ্চারা ক্লাসে ঢুকে গেলে আমরাও বাড়ি চলে যেতাম। কিন্তু এ বার স্কুল খোলার পর থেকেই বাচ্চাদের চাতালে বসিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। তাই আমরাও চাতালের আশপাশে বসে থাকছি। এ দিন আমরা সকলে খুব রেগে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিই।’’

এই ঘটনা নিয়ে সরকার-পোষিত ওই স্কুলের দুই বিভাগের প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য থেকেও উঠে এসেছে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বরাদ্দ করা নিয়ে তরজার বিষয়টি। মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক শেখ আলি আহসানের দাবি, প্রাথমিক বিভাগের জন্য পাঁচটি ঘর ছেড়ে দেওয়া আছে। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে একটি ঘরে জিনিসপত্রের গুদাম এবং অন্যটিতে স্টাফ রুম করা হয়েছে। পড়ুয়াও ভর্তি করা হয়েছে বেশি সংখ্যক। এই সব কারণেই প্রাথমিকে পড়ুয়াদের ঘরের অভাব দেখা দিয়েছে। জায়গা দিতে পারছে না। আমরাও চাই, পড়ুয়ারা ক্লাসরুমে বসুক। কিন্তু কোভিডের পরে আমাদেরও পড়ুয়াদের দূরত্ব-বিধি মেনে বসাতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি ঘর দরকার।’’

অন্য দিকে, প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আকাশ মজুমদারের পাল্টা দাবি, যে পাঁচটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে, তার মধ্যে দু’টি নিরাপত্তাকর্মীদের। দূরত্ব-বিধি মেনে পড়ুয়াদের বসাতে তাঁদের ১৫টি ঘর প্রয়োজন বলে জানান আকাশবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তাকর্মীদের ঘরগুলিতে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। আমি দু’মাস আগে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি। প্রাথমিকের জন্য ১৫টি ঘর বরাদ্দ ছিল। করোনার পরে সেই সংখ্যা কমিয়ে পাঁচ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষকদের বসার ঘরও বরাদ্দ করা হয়নি।’’

এমনই এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আটকে রয়েছে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের বিষয়টি। তাদের অভিভাবকেরাও জানান, প্রাথমিকের জন্য ১৫টি ঘরের প্রয়োজন। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক আকাশবাবু বলেন, ‘‘আমরা মাধ্যমিক বিভাগকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, প্রাথমিকের ছুটি হওয়ার পরে ক্লাসরুম স্যানিটাইজ় করে দেব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। প্রাথমিকের জন্য যে সব ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে, সন্তানদের সেখানে বসিয়ে পড়াতে অভিভাবকেরা রাজি কি না, মঙ্গলবার তা জানতে চাওয়া হবে। তার পরে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school Barasat Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE