Advertisement
E-Paper

জন্মদিনের সপ্তাহ শেষ হল মৃত্যুর সংবাদে

গত শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর জন্মদিনের কেক নিয়ে বাড়িতে হুল্লোড় করতে এসেছিলেন বন্ধুরা। ১৬ তারিখ সেই বন্ধুকেই মর্গে পাঠাতে জড়ো হতে হল বন্ধুদের। উত্সব এবং শোকের মাঝে ব্যবধান কেবল একটা সপ্তাহের। আঠেরোয় পা দিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সদ্য কলেজে পা দেওয়া পূজার।

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৬
মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মা। — স্বাতী চক্রবর্তী

মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মা। — স্বাতী চক্রবর্তী

গত শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর জন্মদিনের কেক নিয়ে বাড়িতে হুল্লোড় করতে এসেছিলেন বন্ধুরা। ১৬ তারিখ সেই বন্ধুকেই মর্গে পাঠাতে জড়ো হতে হল বন্ধুদের। উত্সব এবং শোকের মাঝে ব্যবধান কেবল একটা সপ্তাহের। আঠেরোয় পা দিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সদ্য কলেজে পা দেওয়া পূজার। দিন ১৫ আগেই রামমোহন কলেজ ছেড়ে জয়পুরিয়ায় ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। প্রতিদিনের মতোই শুক্রবারও সাতসকালে অটো ধরেই কলেজে ক্লাস করতে যাচ্ছিলেন। ক্লাস আর করা হল না পূজার। কোনও দিন হবেও না।

পূজার মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে দৌড়ে এসেছেন দিশারী, রাহুল, সাগ্নিক—আরও কত বন্ধু। স্ট্রেচার থেকে সবুজ কুর্তি পরা পূজার নিথর হাতটা বেরিয়ে আসতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছে বন্ধুদল। পুজোর কেনাকাটা, আড্ডার প্ল্যান করতে রোজ রাত পর্যন্ত কথা হতো যে পূজার সঙ্গে, এ ভাবে হঠাৎ তাঁর চলে যাওয়ার খবরে হতবাক সকলেই। টাকী গার্লস স্কুল থেকে এই বছরই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন পূজা। ইচ্ছে ছিল জয়পুরিয়ায় বাণিজ্য নিয়ে পড়ার। ‘‘লিস্ট বেরোতে দেরি হওয়ায় রামমোহন কলেজে ভর্তি হয় ও। দু’সপ্তাহ আগেই জয়পুরিয়া কলেজের প্রাতঃবিভাগে ক্লাস শুরু করেছিল,’’ বলেন পূজার স্কুলবেলার বন্ধু দিশারী।

পাড়ার মেয়ের এমন ম়ৃত্যুর খবরে গোটা এলাকা যেন ভেঙে পড়েছে বেলেঘাটায় পূজাদের ছোট একতলা বাড়িতে। বাইরে ভিড় করে রয়েছেন বন্ধুরা। একমাত্র মেয়ে পূজার ঘরে বসে সদ্য সন্তানহারা মা ঝুমা পাল। বাবা ঝন্টু পালকে যেতে হয়েছে মেয়ের দেহের ময়না-তদন্তের জন্য। মেয়ের কলেজের ব্যাগ পড়ে রয়েছে বিছানায়, শূন্য দৃষ্টি মায়ের। কথা হারিয়েছেন। নীল ব্যাগে তখনও রক্তের দাগ তাজা। এই ব্যাগ থেকে কলেজের পরিচয়পত্র পেয়েই পুলিশ খবর দিয়েছিল পূজার বাড়িতে। খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর কাকা পিন্টু পাল। সোনার দোকানে কাজ করতেন ঝন্টুবাবু। সংসারের হাল ধরতে ঝুমাদেবীও সম্প্রতি রাজারহাটের একটি স্কুলে পড়ানো শুরু করেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, শান্ত স্বভাবের পূজা ছবি আঁকতে ভালবাসতেন, ভালবাসতেন গান গাইতেও। মাসখানেক আগে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিতেও ভর্তি হয়েছিলেন।

ওই রুটের অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে এর আগেও ভুগতে হয়েছে যাত্রীদের। শুক্রবারের এই দুর্ঘটনাই ফের প্রমাণ করে দিচ্ছে বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও বেপরোয়া অটোয় লাগাম দিতে পারেনি পুলিশ। পূজার মৃত্যুর শোকের মাঝেও তাই পরিবারের তরফে বারবার দাবি উঠেছে বেপরোয়া অটো নিয়ন্ত্রণের। পূজার কাকিমা শম্পা পাল বলেন, ‘‘আমাদের যা যাওয়ার তা তো গেলই, তবে অন্য কোনও পরিবারকে বাঁচাতে হলে অটোর এই দৌরাত্ম্য রুখতে হবে।’’

শুক্রবারই এই ঘটনার পরে ওই এলাকার অটোর সেই তীব্র গতি আর নেই। তবে এ সবই যে সাময়িক তা জানেন পথচারী থেকে ভুক্তভোগীর পরিবার, সকলেই।

এ সবের অগোচরে ফোন এলেই, ‘‘পূজা আর নেই’’ বলে ডুকরে উঠছেন যে মা, তাঁর সম্বল শুধুই মেয়ের হাতে জল রঙে আঁকা ছবি, ফ্রেমে বাঁধানো তাঁরই ছোটবেলার ঝাপসা ছবি আর মেয়ের রক্তমাখা ব্যাগ।

Bus auto college girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy