প্রচেষ্টা: বার বার প্রচার সত্ত্বেও মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন নাগরিকদের একাংশ। এমনই এক যুবককে আটকে মাস্ক উপহার দিলেন পুলিশকর্মীরা। শুক্রবার, ভিআইপি রোডের কৈখালি মোড়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সংক্রমণ রোধের প্রাথমিক ধাপই হল কোভিড পজ়িটিভ রোগীর ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’। অর্থাৎ তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছেন, সেই তথ্য জোগাড় করা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে স্মৃতি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো? এমনই সংশয় তৈরি হচ্ছে চিকিৎসক এবং মনোবিদ মহলে।
এর কারণ, স্মৃতির সীমাবদ্ধতা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত দু’দিনে কার কার সংস্পর্শে এসেছেন সাধারণত প্রায় সবাই সেটা মনে রাখতে পারেন। কিন্তু তার আগের দিনের ঘটনাক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মনে রাখা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। চিকিৎসকদের একটি অংশের আশঙ্কা সেখানেই। তাঁদের মতে, এর ফলে কোভিড পজ়িটিভ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অনেকেই তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন, যাঁদের কথা রোগী মনে করতে পারছেন না।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি আজ ও গতকাল কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন, তা হলে তা তিনি সহজেই বলতে পারবেন। দু’দিন আগে কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা-ও হয়তো কেউ কেউ বলতে পারবেন। কিন্তু তার আগের দিনগুলির কথা বলা সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, স্মৃতিরও তো ধারণ ক্ষমতা আছে।’’
জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ অয়ন ঘোষ জানাচ্ছেন, এক জন কোভিড পজ়িটিভ রোগী কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেটা তিনি যত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলতে পারবেন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ তত নিখুঁত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি হল, কেউ তো জানেন না যে, তাঁর শরীরে ভাইরাসটি কবে ঢুকেছে।
আরও পড়ুন: রোগী-ভর্তি এড়াতে করোনার ভয় দেখানোর অভিযোগ
ফলে এটাও ঠিক ভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না, সেই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছেন! অয়নবাবুর কথায়, ‘‘এটা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। হবেও। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবু গত চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ওই ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তার সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করলেও কাজ অনেকটা সহজ হয়।’’
আরও একটি আশঙ্কার কথা মনোবিদদের একটি অংশের থেকে উঠে আসছে তা হল ‘ফলস মেমরি সিন্ড্রোম’। যার অর্থ, অত্যধিক মানসিক চাপে থাকলে স্মৃতির মধ্যে ঠিক জিনিসের সঙ্গেই এমন কিছু জিনিস সংযুক্ত হতে থাকে, যার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক থাকে। এবং এটি একটি স্বাভাবিক প্রবণতা বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’-এর কোভিড সংক্রান্ত মানসিক চিকিৎসার জন্য গঠিত ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য প্রশান্তকুমার রায় জানাচ্ছেন, যদি বার বার কাউকে জিজ্ঞেস করা হতে থাকে তিনি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তখন মানসিক চাপের মধ্যে ঠিক তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি অনেক ভুল তথ্যও হয়তো তিনি দিতে পারেন। এ রকম জরুরি অবস্থায় তা হতেই পারে। তবে প্রশান্তবাবুর মতে, ‘‘এটা ছাড়া বিকল্প কোনও পথও নেই। অতএব এর উপরেই ভরসা করতে হবে।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, চেনা পরিচিত এবং বন্ধুদের সংস্পর্শে এসেছেন কি না, এগুলির উপরেই মূলত গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে যে হেতু সবাই সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যেই ঘুরছেন, তাই সেখানে কোভিড পজ়িটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক কুণালকান্তি মজুমদার জানাচ্ছেন, আক্রান্ত ব্যক্তি সব থেকে বেশি কাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা সংশ্লিষ্ট আক্রান্তের সঙ্গে বেশি ক্ষণ সময় কাটিয়েছেন এমন পরিজন, সহকর্মী, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের চিহ্নিত করে হোম কোয়রান্টিনে রাখা প্রয়োজন। এর বাইরেও হয়তো কোভিড আক্রান্ত অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু তা অল্প সময়ের জন্য হওয়ায় তাতে ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy