প্রতীকী ছবি।
মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশের উপরে আঙুল চেপে রাখলেই মেপে ফেলা যাবে অক্সিজেনের মাত্রা, হার্ট রেট ও শ্বাসের গতি। করোনা আবহে যখন চারপাশে অক্সিমিটারের তুমুল চাহিদা, তখন শুধুমাত্র স্মার্টফোন দিয়েই অক্সিমিটারের কাজ করে ফেলার প্রযুক্তি তৈরি করলেন তিন যুবক। অভিষেক সেনগুপ্ত, মনসিজ সেনগুপ্ত ও শুভব্রত পালের তৈরি এমনই একটি মোবাইল অ্যাপ ইতিমধ্যেই সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে।
সাধারণ অক্সিমিটার কাজ করে ‘ফোটোপ্লেসিথমোগ্রাফি’ (পিপিজি) প্রযুক্তির সাহায্যে। এই পদ্ধতিতে আঙুলের ভিতর দিয়ে আলো পাঠানো হয়। রক্তের ভিতর দিয়ে সেই আলোর যে প্রতিফলন ঘটে, তার থেকেই পাওয়া যায় রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ও পালসের গতি। তিন বাঙালি যুবকের তৈরি ‘কেয়ারপ্লিক্স ভাইটালস’ নামের ওই অ্যাপটিও কাজ করে একই পদ্ধতিতে। আলোর জন্য এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ফোনের ফ্ল্যাশ। এসএসকেএম হাসপাতালে গত দু’মাস ধরে বারোশোরও বেশি রোগীর উপরে এই অ্যাপের ট্রায়াল চলেছে। ১৮ থেকে ৮৫ বছর— বিভিন্ন বয়সের রোগীরা সেই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। দেখা গিয়েছে, অক্সিজেন ও পালস রেট মাপতে প্রায় ৯৮ শতাংশ কার্যকর এই অ্যাপ।
কী ভাবে এল এমন অ্যাপ তৈরির ভাবনা? অ্যাপের নির্মাতা তিন যুবকই পড়াশোনা শেষ করে স্বাস্থ্য প্রযুক্তির কাজে যুক্ত। তাঁদের এক জন, শুভব্রত পাল জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে অক্সিমিটারের তীব্র চাহিদা তৈরি হয়েছে। যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম। এই পরিস্থিতিতে এমন একটি অ্যাপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘আজকাল অধিকাংশ মানুষের হাতেই স্মার্টফোন থাকে। সেই ফোনে শুধু এই অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে। তা হলেই আলাদা কোনও যন্ত্র ছাড়া অক্সিজেন ও হার্ট রেট মাপা যাবে।’’
প্রাথমিক ভাবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে কিছু টাকা দিতে হত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছেন। শুভব্রতের কথায়, ‘‘আমরা প্রথমে এই অ্যাপটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি করেছিলাম। হাসপাতালগুলিকে এটি ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এখন ব্যবসার চেয়ে মানুষকে সাহায্য করা অনেক বেশি দরকার।’’ আপাতত ‘কেয়ারপ্লিক্স ভাইটালস’-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে এই অ্যাপ। তবে খুব শীঘ্রই গুগল প্লে স্টোরেও তা এসে যাবে বলে জানাচ্ছেন প্রস্তুতকারকেরা।
এই অ্যাপ নিয়ে আরও কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে শুভব্রতদের। পরবর্তী ধাপে এই অ্যাপ পিপিজি গ্রাফের বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। ইকোকার্ডিয়োগ্রাম (ইসিজি)-এর সমতুল্য এই পিপিজি গ্রাফের মাধ্যমে হৃদ্রোগের আশঙ্কার কথা জানা যাবে বলে দাবি তাঁদের। সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবার ব্যবস্থাও নিয়ে আসা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy