রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দেবযানীর জিনিসপত্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
চরিত্রের দিক থেকে দুই ভাই-বোন যেন একেবারে বিপরীত।
দেবযানী ধীর-স্থির, শান্ত। সঙ্গীত-অন্ত প্রাণ। পিয়ানোয় সুরের ঝড় তুলতে পারতেন। ছাত্রীরা ছিল তাঁর কাছে সন্তানের মতো। মিষ্টি স্বভাবের জন্য সবার প্রিয় ছিলেন তিনি।
আর পার্থ বরাবরই পরিচিত বদরাগী, স্বল্পবাক বলে। কলকাতায় যে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় তিনি কাজ করতেন সেখানকার কোনও সহকর্মীর সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক ছিল না। অফিসে একা থাকতে ভালবাসতেন। কারও কোনও কথা অপছন্দ হলে চিৎকার করে টেবিল চাপড়াতে শুরু করতেন। সবাই তাই পারতপক্ষে এড়িয়েই চলতেন পার্থবাবুকে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসাররা রবিনসন স্ট্রিটে দে পরিবারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দেবযানীর একটি বায়োডেটা উদ্ধার করেছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৮৪ সালে বেঙ্গালুরুর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে আইসিএসসি পাশ করেছিলেন দেবযানী। দু’বছর পরে ওই স্কুল থেকেই আইএসসি পাশ করার পরে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার একটি সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যার স্নাতক হন তিনি। এর পর ১৯৯২ সালে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে রেডিও ফিজিক্স নিয়ে বি টেক পাশ করেন। এর পর দেবযানী লন্ডন চলে যান। সেখানে ট্রিনিটি কলেজ থেকে পিয়ানোর কোর্স করেছিলেন তিনি। সেটা ১৯৯৩ সাল। পুলিশের দাবি, লন্ডন থেকে ফিরে এসে সঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবে কলকাতার দুটি স্কুলে কাজ করেন দেবযানী। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের জুন মাসে দেবযানীর একটি সিডি-ও প্রকাশ পায়। ওই সিডিটি পার্থর ঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সিডির ওপর লেখা রয়েছে, ‘সঙ্গস ফর গুরুজি’।
কলকাতার ক্যালকাটা গার্লস স্কুলে বেশ কয়েক বছর সঙ্গীত-শিক্ষিকা ছিলেন দেবযানী। শ্রীপর্ণা দত্ত নামে ওই স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রী এ দিন খবরের কাগজে ‘দেবযানী ম্যাম’-র খবরটা দেখে চমকে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্রী। এখনও মনে আছে, ম্যাম বলতেন, ‘গুড মর্নিং’ বলে কাউকে যখন উইশ করবে তখন সেটা মন থেকে করবে। ম্যাম নিজে ক্লাসে ঢুকে যখন আমাদের ‘গুড মর্নিং’ বলতেন, মনে হতো দিনটা যেন ভাল হয়ে গেল।’’ ছাত্র-ছাত্রীরা কখনও দেবযানী ম্যামকে বকতে শোনেননি। তাঁকে রেগে যেতে দেখেননি। এত দিন পরেও দিদিমণির জন্য তাই অনেকের চোখে জল। তাঁদের কথায়, লম্বা স্কার্ট-ফুল ফুল ছাপ শার্ট-ছোট করে ছাঁটা চুল-চোখে চশমা পরে দিদিমণি ক্লাসে ঢুকলেই মন ভাল হয়ে যেত।
পার্থও মেধাবী ছাত্র। তিনিও বি-টেক। কিন্তু কলকাতার যে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন, সেখানে কেউই তাঁর সম্পর্কে ভাল কথা বলতে পারেননি। এ দিন পার্থর এক প্রাক্তন সহকর্মী জানান, পার্থ একটা বড় স্যুটকেস নিয়ে রোজ অফিসে আসতেন। কারও সঙ্গে মিশতেন না। সঙ্গে থাকত অনেক ধরনের টিফিনবাক্স। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেই সব খাবার খেতেন তিনি। প্রচণ্ড বদরাগী। একটা বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ভাল পদে কাজ করলেও পার্থর আচরণে তার কোনও ছাপ ছিল না। বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ বছর কাজ করার পর ২০০৭ সালের শেষের দিকে একটি বিশেষ কাজের জন্য তাঁকে অন্য দায়িত্ব দিতে গেলে পার্থ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সহকর্মীদের কাউকে কাউকে তেড়ে মারতেও যান। শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে পার্থকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে কতৃর্পক্ষ তাঁকে বরখাস্ত করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy