দমদেমর বাসিন্দা অরবিন্দ মণ্ডল। সরকারি কমর্চরী ছিলেন, অবসর নিয়েছেন বহু দিন। মঙ্গলবার স্ত্রীকে নিয়ে শ্যামবাজারের একটি ভোগ্যপণ্য বিপণন কেন্দ্রে এসেছিলেন এসি কিনতে। নামি ব্র্যান্ডের একটি এসি মেশিনের দাম ৪০ হাজার টাকার উপরে শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের সবার চাহিদা। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে মাসিক কিস্তিতেই এসি কিনে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
একই অবস্থা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অয়ন ঘোষের। সদ্য ফ্ল্যাট কিনেছেন। মোটা টাকা কিস্তি দিতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন বউয়ের বায়না, গরমে আর পারা যাচ্ছে না, এসি কিনতে হবে! কিছু দিন কাটানোর চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত গত রবিবার অয়নবাবু এসি কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
এই দু’টি ঘটনা উদাহরণ মাত্র। গরমের ঠেলায় পরিবারের সদস্যদের চাপে অরবিন্দবাবু, অয়নবাবুদের মতো অনেককেই এখন বাজারে এসি কিনতে দৌড়তে হচ্ছে। আর তার জেরে সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও তরতর করে বাড়ছে। বিলের কথা ভেবে রক্তচাপ বাড়ছে বহু মধ্যবিত্ত বাঙালির।
এসি-র ব্যবহার কেমন বাড়ছে?
সিইএসসি-র হিসেবে, গত বছর পয়লা মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কাছে এসি-র আবেদনপত্র জমা পড়েছিল প্রায় ৬,৩৬০টি। এ বছর অঙ্কটা দ্বিগুণেরও বেশি। ওই একই সময়ে সিইএসসি-র কাছে এ বছর আবেদনপত্র জমা পড়েছে ১৪,০৫০-এর মতো। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২০ শতাংশ বেশি। গত বছর সিইএসসি এলাকায় নতুন এসি লেগেছিল প্রায় ৩৯ হাজার। আর এ বছর যে হারে আবেদনপত্র পড়ছে, তাতে সংখ্যাটা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আর এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় গরমের ঠেলায় এসি লাগানোর হিড়িক কী ভাবে বেড়ে গিয়েছে। সিইএসসি-র এক কর্তার কথায়, সবেমাত্র এপ্রিল চলছে। এখনও মে-জুন বাকি রয়েছে। ফলে এই সংখ্যাটা আরও বহু গুণ বেড়ে যাবে।
গ্রাহকরাই বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতায় গ্রীষ্মে তাপমাত্রা সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। টানা গরমে নাজেহাল হতে হচ্ছে শহরবাসীকে। অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। ফলে ক্রয়ক্ষমতা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন এসি কিনতে। বিদ্যুৎ বিলের কথা ভেবে যাঁরা এত দিন এসি কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁরাও এখন উল্টো পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। সিইএসসি-র এক কর্তার কথায়, শুধু গৃহস্থ বাড়িতেই নয়, ছোটখাটো দোকান বা রেস্তোরাঁতেও এখন এসি লাগানোর চল হয়েছে। গরমের সময়ে কোনও দোকানে এসি চললে, সেখানে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে।
সিইএসসি কর্তৃপক্ষ নিজেও জানাচ্ছেন, এ বছর গ্রীষ্মে তাঁদের এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা কমপক্ষে ২০৩৫ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। মূলত এসি-র ব্যবহার বাড়ছে বলেই চাহিদা উর্ধমুখী হবে বলে সংস্থাটি আগেই জানিয়েছে। সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিল কলকাতায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর তাপমাত্রা ছিল। বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে হয়েছিল ১৮৯৭ মেগাওয়াট। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এখনই বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ শতাংশ। গত বছর সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছিল ২০০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
এসি-র ব্যবহার বাড়ছে বলে সিইএসসি-ও গ্রাহকদের চটজলদি পরিষেবা দিচ্ছে বলে দাবি করেছে। অনলাইনেই এসি-র সংযোগের জন্য আবেদন করতে পারছেন গ্রাহকরা। আবেদন করার দিন দু’য়েকের মধ্যে সংযোগও পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎশিল্প মহলের মতে, এখন যে কোনও বড় শহরে বিদ্যুতের চহিদা বাড়তে পারে কেবলমাত্র ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার বাড়লে। অর্থাৎ, যত বেশি এসি, গিজার, ওয়াশিং মেশিন বিক্রি হবে গৃহস্থের ঘরে বিদ্যুতের চাহিদাও তত বাড়বে। অন্য দিকে বহুতল বাজার, নতুন মেট্রো রেল তো আছেই। শিল্প মহলের মতে, কলকাতায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে মূলত ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার বাড়ার কারণেই।
মার্চের শুরু থেকেই এ বছর তাপমাত্রা ধাপে ধাপে বেড়েছে। মাঝে দু’-এক দিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, এসি লাগানোর ক্ষেত্রে কোনও ভাটা পড়েনি। সিইএসসি-র দাবি, গত ২৯ মার্চ তাদের এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছিল ১৭১১ মেগাওয়াট। এপ্রিল মাসে গরম আরও বাড়লে চাহিদা ১৯৭০ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে। মে মাসে সেই চাহিদা কমপক্ষে ২০৩৫ মেগাওয়াটে গিয়ে শেষ হবে বলেই সংস্থাটি মনে করছে। এ ক্ষেত্রে এসি মেশিনই তাদের কাছে যাদুকর বলে সিইএসসি-র কর্তারা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy