—ফাইল চিত্র।
বেসরকারি কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু হলেই চাপান-উতোর শুরু হয়ে যায় পুরসভায়। মৃত্যুর কারণ আদৌ ডেঙ্গি, না অন্য কিছু, তা খতিয়ে দেখতে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, পুর প্রশাসন কি ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা চাপা দিতে চায়? সেই সম্ভাবনা রুখতে এ বার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে মশাবাহিত রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের উপরে নজর রাখবেন পুর চিকিৎসকেরা।
বৃহস্পতিবার কসবার কেআইটি আবাসনের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ ঘোষ ও তাঁর ছেলে দীপ ডেঙ্গিতে মারা যান। কিন্তু পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) এবং অন্য অফিসারেরা ডেঙ্গির কথা মানতে চাননি। যদিও বাবা ও ছেলে যে দুই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তারা লিখিত ভাবেই জানিয়েছিল যে, মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি।
পার্ক সার্কাসের যে বেসরকারি হাসপাতালে দীপ ভর্তি ছিল, শনিবার সেখানকার এক কর্তা জানান, সেখানে ‘ম্যাক এলাইজা’ পদ্ধতিতে ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা হয়। পুর কর্মীরা নিয়মিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ডেঙ্গি আক্রান্তদের সম্পর্কে খোঁজও নেন। কোন পদ্ধতি পরীক্ষা করে ওই হাসপাতাল ডেঙ্গি নির্ণয় করে, সে সম্পর্কে পুরসভা ওয়াকিবহাল বলেও দাবি ওই কর্তার।
কসবার ঘটনা মাথায় রেখেই এ বার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুরসভা। শনিবার পুরকর্তারা এ নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়েছে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে কেউ ভর্তি হলেই প্রতিদিন তাঁর কী চিকিৎসা হচ্ছে, রোগীর হাল কেমন, প্লেটলেট কতটা নামছে, জ্বর কত— এ সব বিষয়ে খোঁজ নেবেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসার। চিকিৎসায় তাঁরা মাথা গলাবেন না ঠিকই, তবে তাঁর অন্য কোনও রোগ রয়েছে কি না, সেই রোগের কী চিকিৎসা হচ্ছে, তার কাগজপত্র দেখবেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত? পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানান, পুরসভার প্রধান কাজ জনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। মশাবাহিত রোগ দমন তারই অঙ্গ। একা পুরসভার পক্ষে ওই কাজ করে ওঠা অসম্ভব। হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র— প্রত্যেকের একটা দায়িত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর একটা নির্দেশ রয়েছে। পুরসভা সেই গাইডলাইন মেনে কাজ করতে এবং করাতে চায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেই নির্দেশ মেনে কাজ হচ্ছে কি না, তা জানার জন্যই মশাবাহিত রোগে ভর্তি থাকা রোগীদের উপরে নজর রাখতে চায় পুরসভা।
এত দিন কী করা হত? পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, তাঁদের দফতরে ‘মর্নিং ডেটা কালেক্টর’ নামে একটি পদ রয়েছে। যাঁরা প্রতিদিন সকালে শহরের সব হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ মশাবাহিত কোনও রোগে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না, খোঁজ নেন। কোনও রোগীর খবর পাওয়া গেলে তাঁর বাড়ির চারপাশে গিয়ে মশা মারার ধোঁয়া ছড়ানো হয়। লার্ভা থাকলে তা মেরে ফেলা হয়। ডেটা কালেক্টরদের তথ্য থেকেই জানা যায়, আক্রান্ত কে কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তপনবাবু জানান, এ দিনের বৈঠকে প্রতিটি বরোর এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসারেরা ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছে, মর্নিং ডেটা কালেক্টরের দেওয়া নথি থেকে কোন হাসপাতালে মশাবাহিত রোগে কে ভর্তি আছেন, তা জেনে নিতে হবে। তার পরে ওই রোগীর প্রতিদিনের খবর নিতে হবে ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসারকে।
এতে লাভ কী? তপনবাবুর জবাব, রোগীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে আর ধন্দ থাকবে না। মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসা চলাকালীন সব তথ্য নথিভুক্ত করবেন। ডেথ সার্টিফিকেট দেখে একে অপরকে দোষ চাপানোর সুযোগ থাকবে না। চিকিৎসা-বিভ্রাটও কমবে।
এটা কি বেসরকারি হাসপাতালে হস্তক্ষেপ নয়? তপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘হস্তক্ষেপের প্রশ্নই নেই। এ শহরে জনস্বাস্থ্যের নোডাল এজেন্সি পুরসভা। মশাবাহিত রোগ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সব রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুরসভাকেই নজর রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy