Advertisement
E-Paper

নেতাদের পুজো ‘গ্রাস’ করেছে রাজপথ

‘ঐতিহ্য’। কালীপুজো করা যেমন, তেমনই দমদম রোডে বছরের পর বছর রাস্তা দখল করে মণ্ডপ গড়াটাও ঐতিহ্য উদ্যোক্তাদের। যার জেরে কালীপুজোর আগে থেকে পুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত যানজটে এলাকাবাসীর নাকাল হওয়াটাও কার্যত ‘ ঐতিহ্য’ হয়েই দাঁড়িয়েছে দমদম রোডে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৭
রাস্তার সিংহভাগ জুড়ে মণ্ডপ। দমদমে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

রাস্তার সিংহভাগ জুড়ে মণ্ডপ। দমদমে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

‘ঐতিহ্য’।

কালীপুজো করা যেমন, তেমনই দমদম রোডে বছরের পর বছর রাস্তা দখল করে মণ্ডপ গড়াটাও ঐতিহ্য উদ্যোক্তাদের। যার জেরে কালীপুজোর আগে থেকে পুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত যানজটে এলাকাবাসীর নাকাল হওয়াটাও কার্যত ‘ ঐতিহ্য’ হয়েই দাঁড়িয়েছে দমদম রোডে।

গোটা দমদম রোডে মাত্র তিনটি পুজো। নাগেরবাজারের দিক থেকে দমদম স্টেশনের দিকে যেতে ‘জ’পুর জয়শ্রী’, ‘খামখেয়ালী সঙ্ঘ’ এবং ‘আমরা মিলেছি’— এই তিনটি ক্লাব শেষ তিন-চার দশক ধরে এ ভাবেই রাস্তা জুড়ে পুজো করে আসছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অফিসের ব্যস্ত সময়ে যখন বিপুল গাড়ির চাপ, তখন অপরিসর রাস্তায় আরও কমে আসে গাড়ির গতি। তাঁরাই জানালেন, বছরের পর বছর ধরে এই ক্লাবগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন এলাকার দাপুটে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যে কারণে প্রশাসন কখনওই পুজোগুলি নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেনি। অভিযোগ, পুজোর অনুমতি চাইতে পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসে ওই তিনটি পুজোর উদ্যোক্তারা রাস্তার ছাড় নিয়ে রীতিমতো দরকষাকষি করেন। পুলিশ আপত্তি জানালে স্থানীয় বিধায়ক বা কোনও প্রভাবশালী নেতা পুলিশকে ফোন করেন। যার জেরে প্রশাসন কার্যত বাধ্য হয় পুজোর অনুমতি দিতে। প্রসঙ্গত, তিনটি পুজোই হয় ঘুঘুডাঙা পুলিশ ফাঁড়ির প্রায় নাকের ডগায়।

বর্তমানে তিনটি ক্লাবেরই মাথায় রয়েছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার তিন দাপুটে তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁদের মধ্যে এক জন পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদও। জ’পুর জয়শ্রীর পুজো নিয়ন্ত্রণ করেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস, খামখেয়ালি সঙ্ঘের মাথায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর (কেটি) পাল এবং আমরা মিলেছি ক্লাবটির সর্বেসর্বা ১৫ নম্বরের কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস (ফুচু) বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের মধ্যে কেটিবাবু ও ফুচুবাবু দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বৃহস্পতিবার এই দু’টি পুজো তাঁরই উদ্বোধন করার কথা। আর সঞ্জয়বাবুর পরিচিতি রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা পূর্ণেন্দু বসু ঘনিষ্ঠ হিসেবে। শুক্রবার জ’পুর জয়শ্রীর পুজোটির উদ্বোধন করার কথা পূর্ণেন্দুবাবুর। পুজোগুলির হোর্ডিংয়ে মন্ত্রী-বিধায়কদের ছবিও রয়েছে। এলাকার খবর, বছরের পর বছর ধরে এমনই সব হেভিওয়েট নেতৃত্বের লাইন-আপ দেখেই প্রশাসনও আর ওই পুজোগুলিকে ঘাঁটায় না।

দমদম রোড চওড়ায় ৬০ ফুটের কাছাকাছি। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মণ্ডপ তৈরি করতে খামখেয়ালি সঙ্ঘ রাস্তা দখল করেছে ২২ ফুটের কাছাকাছি। আমরা মিলেছি-র দখলে রয়েছে ২৪ ফুট রাস্তা। আর জ’পুর জয়শ্রীর দখলে রয়েছে ২০ ফুট মতো।

বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে রাস্তা আটকে পুজোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কেন?

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা জানান, রাস্তার ছাড় নিয়ে একটা দড়ি টানাটানি সব সময়ই চলে। এ বার ওই তিনটি পুজোকে রাস্তার ছাড় বাড়াতে নোটিসও দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘তিনটি পুজোই বহু পুরনো। ফলে অনুমতি দিতেই হয়। তবে পুলিশও তিনটি পুজোকেই যথাসম্ভব রাস্তা ছেড়ে রাখায় বাধ্য করতে চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও ফুটে-ইঞ্চিতে আমাদের নির্দেশ পুরোপুরি পালন হয় না।’’

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন-২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘আমরা অন্তত ৫০ শতাংশ রাস্তা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছি। যাতে মই-সহ দমকলের স্বাভাবিক যাতায়াতের জায়গা থাকে। রাস্তা থাকে যথাসম্ভব যানজট মুক্তও।’’

কী বলছেন পুজো কমিটির মাথারা? জ’পুর জয়শ্রী-র তরফে কাউন্সিলর সঞ্জয় দাসের দাবি, ‘‘আমাদের মণ্ডপের বেশিটাই ফুটপাথের উপরে। রাস্তা নেওয়া হয়েছে চার থেকে পাঁচ ফুটের মতো।’’

খামখেয়ালি সঙ্ঘের তরফে কেটিবাবু বলেন, ‘‘আগে আরও বেশি রাস্তা জুড়ে পুজো হতো। কালীপুজোর সঙ্গে এখানকার বাসিন্দাদের আবেগ জুড়ে আছে। তবে ধীরে ধীরে এখন রাস্তার ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।’’

অন্য দিকে আমরা মিলেছি-র পক্ষে ফুচুবাবু বলেন, ‘‘আমাদের জন্মের আগে থেকে ওই সব পুজো হচ্ছে। পুজো বন্ধ করা যায় নাকি! তবে রাস্তা যানজটমুক্ত রাখতে আমরা পুরসভার তরফে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রাস্তায় নামাই।’’

তবে এ ভাবে পুজো করার জেরে যে মানুষকে যানজটে নাকাল হতে হয়, তা মানছেন নেতারাও। মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কথায়, ‘‘ফাটাকেষ্টর পুজো তো এ ভাবেই হয়। এটা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। দুটো দিন হয়তো একটু সমস্যা হয়। তবে উৎসব তো মানুষই করে।’’ মন্ত্রী ব্রাত্যবাবুর ব্যাখ্যা, বহু বছর ধরেই এই পুজো এ ভাবেই হয়। তবে মানুষ যদি না চান, তবে তাঁরা আমাদের জানালে আগামী দিনে সে ভাবেই চলব।

প্রতি বছরের মতো তাই এ বারও যানজট হবে দমদম রোডে। এমনটাই মনে করেন এলাকার মানুষ।

Dumdum Municipality Kali puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy