একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপে। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বিধিনিষেধ উড়িয়ে একাধিক মণ্ডপে জনতার ঢল নেমেছিল মহালয়ার পরদিন থেকেই। দ্বিতীয়াতেও দেখা গিয়েছে সেই একই চিত্র। ভিড়ের ছবিটা সব থেকে বেশি উদ্বেগের ছিল শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপের সামনে। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তবে কি সব বিধিনিষেধ শুধুই খাতায়-কলমে? প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীভূমির ভিড় নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি, সতর্ক না হলে কড়া পদক্ষেপ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। যদিও মহালয়ার পরের দিন থেকেই যে জনতার এমন ঢল নামতে পারে, তা নিয়ে পুলিশের হুঁশই ছিল না বলে অভিযোগ। কারণ, কলকাতা পুলিশ মণ্ডপের বাইরে পুলিশি বন্দোবস্ত রাখার পরিকল্পনা করেছে চতুর্থী থেকে, এমনটাই জানাচ্ছেন খোদ সিপি। আর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব যে পুলিশ এলাকার অন্তর্গত, সেই বিধাননগর কমিশনারেট পুলিশি বন্দোবস্ত শুরু করছে তৃতীয়া থেকে।
এ দিনও অবশ্য একই রকম ভিড় দেখা গিয়েছে ওই মণ্ডপের বাইরে। দূরত্ব-বিধি পালনের দায়িত্ব বোধ তো দূর, সেখানে হাজির অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক ছিল না। এ নিয়ে শ্রীভূমির পুজোকর্তাদের সরাসরি সতর্ক করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট জানান, এ বিষয়ে দ্রুত সতর্ক না হলে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি, ওই মণ্ডপের উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানতে চাওয়া হয়, এত উঁচুতে লেজ়ার আলো লাগানো হল কী ভাবে? মণ্ডপের কাছেই বিমানবন্দর। ফলে বিমান চলাচলের বিষয়টি কি কারও মাথায় আসেনি? দমকল এবং পুলিশ কী ভাবে এমন মণ্ডপ তৈরির অনুমতি দিল, সেই প্রশ্নগুলোও উঠেছে। প্রসঙ্গত, এই পুজোর মূল কর্তা হলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু স্বয়ং। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে সুজিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। শ্রীভূমির এক পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামীর দাবি, ‘‘মানুষকে কি আর ঠাকুর দেখতে আসবেন না বলা যায়!’’ যদিও তড়িঘড়ি মণ্ডপের গায়ে লাগানো লেজ়ার আলো উদ্যোক্তারা বন্ধ করে দেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে ভিড়ের নিরিখে পিছিয়ে নেই শহরের অন্য মণ্ডপগুলিও। চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষের দাবি, তাঁদের মণ্ডপের কাছেও পরিস্থিতি একই রকম। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। ভিড়ে কে কাকে টেক্কা দিচ্ছে, এখন থেকেই সেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ সুরুচি
সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তা কিংশুক মৈত্রের দাবি, তাঁদের মণ্ডপের কাজ এখনও শেষ না হলেও ভিড় ভিতরে ঢুকে আসছে। যা আটকানো যাচ্ছে না। দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপে এখনও প্রতিমা আসেনি। তবু হাজির উৎসাহী জনতা। বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর পুজোকর্তা গৌতম নিয়োগী আবার বললেন, ‘‘এখন থেকেই যা লোক হতে শুরু করেছে, তাতে এ বার ভয় লাগছে। আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। ভিড় করে লোকে সেই কাজও দেখছেন।’’
‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজাকর্তা শাশ্বত বসু জানালেন, এত ভিড় হচ্ছে যে মণ্ডপের বাইরের সরু জায়গা দিয়ে মানুষকে ঘুরিয়ে বার করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। হাতিবাগানের কাশী বোস লেন আবার ভিড় এড়াতে সন্ধ্যায় মণ্ডপের আলো নিভিয়ে রাখছে। কিন্তু পুলিশ কী করছে? কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘চতুর্থীর দিন থেকে পুলিশি বন্দোবস্ত রাখার পরিকল্পনা হয়েছে।’’ বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (সদর) জানিয়েছেন, তৃতীয়া থেকে পুলিশি বন্দোবস্ত রাখার কথা। তার আগেই পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy