Advertisement
E-Paper

মণ্ডপে তাঁদের জন্য বিমা, জানতেনই না দর্শনার্থীরা!

পুজোর পরে হিসেবের সেই খাতা নিয়ে বসে এক পুজো উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘এই খরচটা দেখলে সবচেয়ে খারাপ লাগে। এ বারও বিমা কোনও কাজেই এল না। তবু করিয়ে রাখতে হয়।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৭
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শিল্পীর টাকা, প্রতিমার দাম, আলো, সাউন্ড বক্সের খরচের পাশাপাশি পুজো কমিটির ঘর-কাটা খাতায় রয়েছে আরও একটি বিষয়। মোটা অক্ষরে ‘ইনসিওরেন্স’ লেখা সেই ঘরে দর্শনার্থীদের সুরক্ষায় কেউ পুজোর পরিকল্পনা শুরুর সময়েই লিখিয়েছেন দেড় লক্ষ টাকা। কেউ আবার পুজোর দু’মাস আগে পরিস্থিতি বুঝে যোগ করিয়েছেন ৬০ বা ৭০ হাজার টাকা।

পুজোর পরে হিসেবের সেই খাতা নিয়ে বসে এক পুজো উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘এই খরচটা দেখলে সবচেয়ে খারাপ লাগে। এ বারও বিমা কোনও কাজেই এল না। তবু করিয়ে রাখতে হয়। কিছু ঘটে গেলে, বলা তো যায় না!’’ অবশ্য তাঁদের জন্য যে বিমার ব্যবস্থা রয়েছে, তা জানতেন না দর্শনার্থীদের বড় অংশই। বিষয়টি শুনে এমনই এক জন বললেন, ‘‘এমন ব্যাপারও আছে! এ জিনিস তো আগে শুনিনি।’’

শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, প্রতিমা, মণ্ডপ এবং শিল্পীদের জন্য বিমা করিয়ে রাখার চল বহু দিনের। তবে এ বার সেই বিমার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বিমা। অর্থাৎ, ভিড় ঠেলে প্রতিমা দর্শনে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে শেষ মুহূর্তে ক্ষতিপূরণের বোঝা পুজো উদ্যোক্তাদের বইতে না হয়। সে ক্ষেত্রে সরাসরি টাকা মেটাবে বিমা সংস্থাই। অনেকে আবার এর মধ্যেই নিরাপত্তা ক্ষেত্রে পুজো কমিটির পুরস্কার জেতার কৌশলও দেখছেন। হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো-কর্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেই দিলেন, ‘‘যে যা-ই বলুন, পুরস্কার তো একটা ব্যাপার বটেই। দর্শনার্থীর বিমা রয়েছে জানলে বিচারকেরাও প্রভাবিত হন। তাই সব পুজোই এ বার কম-বেশি দর্শনার্থীদের বিমার পথে হেঁটেছেন।’’

ন্যাশনাল ইনসিওরেন্সের ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ প্রধান বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পুজো কমিটি ফায়ার ইনসিওরেন্স ও পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্টের বিমা করিয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতি এক হাজার টাকার বিমার জন্য প্রায় ১০ টাকা করে প্রিমিয়াম দিতে হয়।’’

দর্শনার্থীদের বিমার খরচের তালিকায় এ বার উপরের দিকে ছিল নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। ওই পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানান, এ জন্য তাঁরা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। এ ছাড়াও মণ্ডপ, শিল্পী, মণ্ডপ-কর্মীদের জন্য বিমা ছিল মোট এক কোটি ১০ লক্ষ টাকার। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও বিপদই কাম্য নয়। কিন্তু, ব্যবস্থা করে রাখতে হয়। তা ছাড়া, বিপদ ঘটলে এক সঙ্গে অনেকের ঘটবে এটাও ভাবা যায় না। তবে যত জনেরই সমস্যা হোক, তাঁরা টাকা পেয়ে যেতেন।’’ একই পথে হেঁটে দর্শনার্থীদের জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বিমা করেছিল ত্রিধারা সম্মিলনীও। দর্শনার্থীদের বিমার জন্য আবার বিমা সংস্থাকে হাতিবাগান সর্বজনীন প্রিমিয়াম দিয়েছে ৮৬০০ টাকা।

অন্য বিমার চল থাকলেও ২০১৫ সালে দেশপ্রিয় পার্কে ‘বড় দুর্গা’-র বিপর্যয়ের পর থেকেই দর্শনার্থীদের বিমা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব। ওই বছর দর্শনার্থীদের ভিড়ে পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পঞ্চমীর দিনই দেশপ্রিয় পার্কের পুজোয় সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সেই থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা অনেক বেশি সক্রিয় বলে জানালেন ওই পুজোর উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘মণ্ডপ, প্রতিমার গয়নার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ১০ লক্ষ টাকার বিমা করিয়ে রেখেছিলাম আমরা। এ জন্য দেশপ্রিয় পার্ক ২৬ হাজার টাকার প্রিমিয়াম দিয়েছে।’’

Durga Puja 2019 Insurance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy