বস্তির ভিতরে তিনতলা বাড়িতে আগুন লেগেছে বলে খবর গিয়েছিল দমকলের সদর দফতরে। দুপুর ১টা ২০ নাগাদ সেই খবর পাওয়া মাত্রই রওনা হয়ে যায় দমকলের গাড়ি। কিন্তু ঘটনাস্থলে সেই গাড়ি পৌঁছতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। আর তাতেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা রাগ উগরে দেন দমকলকর্মীদের উপরে। জনতার ছোড়া ইট-পাটকেলে কয়েক জন দমকলকর্মীর পাশাপাশি জখম হন স্থানীয় এক যুবকও। সোমবার দুপুরে এন্টালি থানার মতিঝিলে এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধুন্ধুমার বেধে যায়। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার পরে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারে দমকল।
পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকলের দশটি ইঞ্জিন। তবে কী কারণে আগুন লেগেছিল, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে পারেননি দমকল কর্তৃপক্ষ।
দমকল ও পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর ১টা নাগাদ এন্টালি থানার ৫ নম্বর মতিঝিল লেনে ওই তিনতলা বাড়িটিতে আগুন লাগে। তিনটি তলা মিলিয়ে মোট ২৬ জন ভাড়াটে থাকেন ওই বাড়িতে। তিনতলাতেই থাকেন ন’জন। সেখানকারই একটি বন্ধ ঘরে আগুন লাগে বলে অনুমান দমকলের। কেউ বোঝার আগেই তা দ্রুত তিনতলায় ছড়ায়। পুড়ে যায় সবক’টি ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসবাব, বাসনপত্র। আগুনের তাপে তিনতলার ছাদ থেকে টালি ভেঙে পড়তে থাকে। আগুনের বাড়ন্ত তীব্রতা থেকে আশপাশের বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়। আতঙ্কে আশপাশের বাড়ি থেকেও লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
ইতিমধ্যে পৌঁছয় দমকল। তাদের দেরি দেখে উত্তেজিত জনতা দমকলকর্মীদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান। গোলমাল বাড়তে বাড়তে এক সময়ে দমকলের একটি গাড়ির দখল নিয়ে নেন স্থানীয় মানুষ। তাঁরাই জল দেওয়ার চেষ্টা করতে গেলে ভেঙে যায় হোসপাইপের মুখ। অকেজো হয়ে পড়ে গাড়িটি। পরে পুলিশ এসে জনতার ক্ষোভ সামাল দিলে দমকলকর্মীরা কাজ শুরু করেন।
ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাপে তিনতলার দেওয়ালের ইট ও ছাদের টালি ভেঙে পড়ছে নীচের রাস্তায়। যার জেরে রিঙ্কু নামে স্থানীয় এক যুবকের মাথা ফেটে যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দমকলকর্মীদের দাবি, তিনতলা থেকে একটি টালি রিঙ্কুর মাথায় পড়েছিল।
তিনতলার যে ঘরে প্রথম আগুন লাগে, তাঁর লাগোটা ঘরটিতে থাকেন মহম্মদ সাবরেজ আনসারি। ঘটনার সময়ে তিনি ঘরেই ছিলেন। সাবরেজের কথায়, ‘‘হঠাৎ দেখি আমার ঘর আর পাশের ঘরের মাঝে দেওয়ালটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। আমাদের ঘরের দিকে ছুটে আসছে আগুনের গোলা। এর পরেই আমরা নীচে নেমে যাই। আমার কলেজের সব নথিও পুড়ে গিয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, ঘটনার সময়ে ছিলেন না পাশের ঘরের বাসিন্দা মহম্মদ ফিরোজ ওরফে মণি। তালাবন্ধ করে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, সেই সময়েই বিদ্যুতের তার থেকে আগুন লেগে যায় ঘরে। যদিও বাসিন্দাদের অন্য অংশের দাবি, একটি ঘরে রান্নার স্টোভ জ্বালিয়ে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাসিন্দা। সেখান থেকেই আগুন লাগে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির সরু গলির পুরোটা জুড়েই পুরনো বৈদ্যুতিক তারের জটলা। বাড়ির বারান্দা, জানালা ঘেঁষে রয়েছে তার। এ দিন আগুন ওই বাড়ির নীচের তলাতেও লাগলে তা আরও অনেক বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। দমকলকর্মীদের কথায়, ‘‘পুরনো তারগুলি খুবই বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। পাল্টানো জরুরি।’’
কিন্তু বাড়ি বা আশপাশের তার পাল্টাবে কে? অগ্নিদগ্ধ বাড়ির বর্তমান এক অংশীদার মহম্মদ তালেফ বলেন, ‘‘বাড়িটি অনেক দিনের পুরনো। ভাড়াটেদের কাছ থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে পুরনো তার পাল্টানো সম্ভব নয়।’’ ভাড়াটেরা এ নিয়ে মন্তব্য করেননি।
এ দিন আগুন ছড়ানোর পিছনে বাড়ির বাসিন্দা-সহ প্রতিবেশীরাও দমকলের দেরিতে পৌঁছনোকেই দায়ী করেছেন। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ১টার কাছাকাছি সময়ে আগুন লাগা মাত্র দমকলে বারবার ফোন করা হয়। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে যখন দমকল পৌঁছয়, তখন আগুনে প্রায় সব শেষ। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, প্রথমে আসা গাড়িগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল ছিল না। সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন দমকল কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy