Advertisement
E-Paper

আবহে বর্ষবরণ, মূল সুর ভোটের প্রচার

স্লোগান নেই। পুরভোটের তিন দিন আগে মিছিলের মুখে মুখে শুধুই রবীন্দ্রগান ও কবিতা। পয়লা বৈশাখের ছোঁয়ায় ভোট-প্রচারের রংটাই হঠাৎ পাল্টে গেল। বুধ-সকালে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মপুকুর থেকে যে পতাকাহীন মিছিল নামল, তা আসলে প্রভাতফেরি। লালপাড়-সাদা শাড়ির নারী-বাহিনীর ‘এসো হে বৈশাখ’ আবাহনই প্রচারের মূল সুরটা বেঁধে দিল। মাইকের আহ্বানেও ভোট চাওয়ার দিকটা উহ্য থাকল। শুধু বলা হল, পুরনেতা সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মনুয়াদা আপনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৪
বাদ্যি বাজিয়ে বিজেপি-র হয়ে পুরভোটের প্রচারে পথে নামলেন ‘নরেন্দ্র মোদী’রা। বৃহস্পতিবার ট্যাংরায়। ছবি: শৌভিক দে।

বাদ্যি বাজিয়ে বিজেপি-র হয়ে পুরভোটের প্রচারে পথে নামলেন ‘নরেন্দ্র মোদী’রা। বৃহস্পতিবার ট্যাংরায়। ছবি: শৌভিক দে।

স্লোগান নেই। পুরভোটের তিন দিন আগে মিছিলের মুখে মুখে শুধুই রবীন্দ্রগান ও কবিতা। পয়লা বৈশাখের ছোঁয়ায় ভোট-প্রচারের রংটাই হঠাৎ পাল্টে গেল।

বুধ-সকালে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মপুকুর থেকে যে পতাকাহীন মিছিল নামল, তা আসলে প্রভাতফেরি। লালপাড়-সাদা শাড়ির নারী-বাহিনীর ‘এসো হে বৈশাখ’ আবাহনই প্রচারের মূল সুরটা বেঁধে দিল। মাইকের আহ্বানেও ভোট চাওয়ার দিকটা উহ্য থাকল। শুধু বলা হল, পুরনেতা সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মনুয়াদা আপনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বিকেলে ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের পতাকাহীন রোড-শোয়েও প্রায় একই দৃশ্য। বাউল গান, রবীন্দ্র সঙ্গীতের ফাঁকে দেখা গেল, হাতে জাব্দা সঞ্চয়িতা নিয়ে কবিতা পড়ছেন প্রার্থী দেবাশিস কুমার। বচ্ছরকার বাঙালিয়ানা বা রাবীন্দ্রিক আবেগও দিন-মাহাত্ম্যে প্রচার-মেনুর প্রায় মেন কোর্স হয়ে উঠল।

অতএব প্রার্থীরা এ দিন মিটিং-মিছিল যত করেছেন, গয়নার দোকানে হালখাতা উদ্বোধন বা পাড়ার পার্কে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনে ততটাই ব্যস্ত ছিলেন। গড়িয়ার ব্যস্ত বাজার এলাকায় দোকানে দোকানে রীতিমাফিক ক্রেতাদের শরবত-মিষ্টিমুখের আপ্যায়ন চলছিল ভরসন্ধ্যায়। ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী এসে হাসিমুখে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। ‘শুভ’ দিনে পতাকা-ব্যানার ছিল না উল্টোডাঙায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের অনিন্দ্য রাউতের পদযাত্রাতেও। ট্যাংরায় বিজেপি-র প্রচারে মোদী-মুখোশ পরে ঢোল-ড্রাম বাজিয়ে নাচেও উৎসবের আমেজ।

বাঙালির আবেগের নরম জায়গাটা চিনতে কিন্তু অনেক প্রার্থীই ভুল করেননি। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ উপাধ্যায় তো দিনটা বেছেই নিয়েছিলেন, এলাকায় সংখ্যালঘু বাঙালি জনতার সঙ্গে জনসংযোগের জন্য। নারকেলডাঙা নর্থ রোডে যে আবাসনে তাঁর বাস, সেখানে এবং বাগমারি বাজারের কাছে বিভিন্ন এলাকায় নববর্ষে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন তিনি। ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-প্রার্থী শান্তনু সিংহের সভামঞ্চ জুড়েও নববর্ষ সম্ভাষণ। বিদায়ী বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত ব্যস্ত, ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিশিষ্ট ভোটার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্যদের সঙ্গে সামাজিকতায়। বাঘা যতীন এলাকায় সিপিএমের নবীন প্রজন্মের মুখ তথা গত পুরভোটে জয়ী কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্করও এ বার ভোটপ্রচার পর্বে নতুন বছর পড়ায় খানিক স্বস্তিতে।

স্বস্তি কেন? ‘‘কেন নয়? একটা শুভেচ্ছা-কার্ড করেছি। তাতে নিজের ছবি আছে, দলীয় প্রতীক নেই। আমি নিজে গিয়েছি, একান্তই না–পারলে অন্য কমরেডরা তা সকলের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন,’’ বললেন ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের রিঙ্কু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ফ্লেক্স-ব্যানার লাগালেই তা প্রতিপক্ষ দল ছিঁড়ে দিচ্ছে। সুতরাং, ভোটারদের কাছে নিজের পরিচিতি পৌঁছে দিতে দারুণ কাজে আসছে পয়লা বৈশাখের কার্ড।’’ জোড়াবাগানে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী সুজাতা সাহা ও তাঁর স্বামী (বিদায়ী কাউন্সিলর) অজয় সাহা মিলেও নববর্ষের কার্ড ছাপিয়েছেন। তাতে সুজাতাদেবীর ছবি। তবে অবাঙালি অধ্যূষিত এলাকা বলে উল্টো পিঠে হিন্দিতে শুভেচ্ছাও লেখা হয়েছে।

অন্য বার অজয়বাবু প্রার্থী হলে, সুজাতাদেবীই ঘর সামলান। এ বার কি তবে ভূমিকাটা পাল্টাল? অজয়বাবুর জবাব, ‘‘তা আর পুরোপুরি কী করে হবে? পোড়খাওয়া প্লেয়ার বলে আমাকেও তো ওঁর (সুজাতা) সঙ্গে প্রচারে থাকতে হচ্ছে।’’ কোনও কোনও দিন কমরেডদের বাড়ি থেকেও খাবার আসছে। তবে পয়লা বৈশাখ সকালটা মন দিয়ে বাড়িতে রান্না করেছেন সুজাতাদেবী। বেলগাছিয়া-পাইকপাড়ায় তিন নম্বর ওয়ার্ডে কনীনিকা বসু ঘোষও নববর্ষে সকাল-সকাল উঠে আড় মাছ রেঁধেছেন। তার পরেই বাড়ির কাছে রেল আবাসনে ঘরে-ঘরে প্রচার। সন্ধ্যায় বোনের সঙ্গে দেখা করার সামাজিকতাটুকু সেরে রাতে ফের বেলগাছিয়ার বস্তি এলাকায় মিটিং।

নববর্ষ হতে পারে। তবু ভোট বলে কথা! তাই শাসক দলের মেয়রপদ প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায় সকাল আটটার মধ্যে বেহালা থেকে সুদূর উত্তর কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাগাছির তখনও ভাল করে ঘুম ভাঙেনি। আগন্তুক নেতাকে দেখে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে দলের কর্মকর্তাদের ‘ফুল কই’, ‘ফুল কই’ রব উঠল। গলায় মালা, কোলে সাদা পায়রা নিয়ে শোভনবাবু ভোটারদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন। সিপিএমের পোড়খাওয়া পুরযোদ্ধা, পাশেই ২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুধাংশু শীল কিন্তু তাঁর এলাকায় যৌনপল্লির অংশটুকু ঘোরার জন্য দুপুর সাড়ে বারোটা-একটার সময়টা বেছে নিয়েছিলেন।

বেলা অবধি বিশ্রাম পর্ব সেরে তখন আবার জাগছে এলাকা। চিৎপুর রোডের বাড়ির সাবেক সিঁড়ি ভেঙে পাড়ার ‘মিন্টুদা’ উপরে উঠতেই এক মহিলা নতুন বছরের পুজোর লাড্ডুপ্রসাদ এগিয়ে দিলেন।

পয়লা বৈশাখের ফাঁকফোকরে রাজনীতির যুদ্ধ এ ভাবেই মিশে গেল।

Riju Basu Trinamool BJP Municipal election Sovan Chattopadhyay Kolkata Municipal Corporation Sonagachi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy