বিপদ: বিস্ফোরণের পরে বাজি কারখানা। রবিবার, সোনারপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
এ বারই প্রথম নয়।
সোনারপুরের গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাজির কারখানায় বছর দেড়েক আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তখনও পরপর বিস্ফোরণ হয়েছিল। কয়েকটি সারমেয় বাজির আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। কিন্তু কোনও শ্রমিক জখম হননি। ওই ঘটনার পরে তরুণবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের ওই কারখানা চালু করেছেন তিনি। বারুইপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই সময়ে আদালতে তরুণবাবু বাজির কারখানার সব লাইসেন্স পেশ করেছিলেন।
কিন্তু ওই ঘিঞ্জি এলাকায় বাজি কারখানা তৈরি হল কী ভাবে? এ বিষয়ে পুলিশের কোনও নজরদারি নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তদন্তকারীদের কথায়, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও দমকল দফতরের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার পরেই জেলা প্রশাসনের তরফে বাজির কারখানার লাইসেন্স দেওয়া হয়। বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ রবিবার বলেন, ‘‘আমরা ওই কারখানার লাইসেন্সের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ওই কারখানায় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।’’ রবিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হননি বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। পুলিশের তরফে গুরুতর ভাবে জখম করার ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় আর কেউ জখম হয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বারুইপুর জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন। এক পুলিশকর্তার কথায়, এ দিন বিস্ফোরণের পরে স্থানীয় বাসিন্দারাই জখম শ্রমিকদের উদ্ধার করেছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, সাধারণত বাজির কারখানায় বিস্ফোরণের পরে জখমেরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। রবিবার দুপুরে পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষের নেতৃত্বে ওই এলাকায় পুলিশি টহলদারি শুরু হয়েছে। তবে জখমের সংখ্যা বাড়েনি বলেই জানিয়েছে পুলিশ। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে চার জনকে চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন আতসবাজির আড়ালে চকলেট বোমা-সহ নানা বাজি তৈরি করা হয় সেখানে। সে কাজে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকত কি না, পুলিশের তরফে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিনের ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, কারখানার এক দিকে আতসবাজি তৈরি করে রাখা ছিল। অন্য দিকে আতসবাজি তৈরির কাজ চলছিল। কোনও ভাবে বাজি তৈরির সময়ে আগুন ধরে যায়। ওই আগুন মজুত করে রাখা বাজিতে ছড়িয়ে যাওয়ায় পরপর ঘটেছে বিস্ফোরণ। ঘটনার পরেও কারখানায় ড্রাম ভর্তি অতি দাহ্য রাসায়নিক উদ্ধার করা হয়েছে। ওই কারখানায় ‘শেল’ জাতীয় আতসবাজি তৈরি করা হত বলেও অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। ওই বাজিতে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সে সব এলাকা থেকে পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তা ছাড়া তুবড়ির ভাঙা খোলও উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়সের ভারে তরুণবাবু কারখানার দেখভাল করতে পারেন না। তাঁর দুই ছেলেই মূলত ব্যবসা চালান। তবে তরুণবাবুর মালিকানাতেই ওই কারখানা চলছিল বলে তাঁর বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy