Advertisement
০২ মে ২০২৪

শিশুর খোঁজে ‘গা-ছাড়া’, মাকে ফেরাল থানা, গ্রেফতার বাবা

রবিবার রাতের ওই ঘটনা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় বেনিয়াপুকুর থানায় যান মহিলা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

মেয়ে হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল লেগেই থাকত। অভিযোগ, রবিবার বেশি রাতে জোর করে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিন বছরের কন্যা সন্তানকে পার্ক সার্কাস ময়দানে ছেড়ে এসেছিলেন বাবা। স্বামীর জোরের কাছে হেরে গিয়ে কী ভুল করেছেন তা বুঝতে পেরে মহিলা ফের ছোটেন পার্ক সার্কাস ময়দানে। কিন্তু খুঁজে পাননি ছোট্ট মেয়েকে।

রবিবার রাতের ওই ঘটনা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় বেনিয়াপুকুর থানায় যান মহিলা। অভিযোগ, ওই থানায় সেই সময়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার মহিলাকে নিয়ে পার্ক সার্কাস ময়দানে এসে খোঁজাখুঁজি করলেও তিনি মহিলার থেকে অভিযোগ নিতে চাননি। মহিলার অভিযোগ, ওই ডিউটি অফিসার তাঁকে কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। কারণ কড়েয়া থানার অধীনে পার্ক সার্কাসের লোহাপুল এলাকায় ওই দম্পতির বাড়ি। ফলে ওই রাতে মহিলা ফের কড়েয়া থানায় ছুটতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত কড়েয়া থানা ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সোমবার রাতে ট্যাংরা অঞ্চল থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির বাবাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে কন্যাসন্তানকে পরিত্যাগ করার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছ, কন্যা সন্তানকে নিয়ে রবিবার রাতেও দম্পতির মধ্যে ঝামেলা হয়। তার পরেই ওই ব্যক্তি শিশুটিকে নিয়ে পার্ক সর্কাস ময়দানে চলে যান। স্বামীর পিছন পিছন ছোটেন স্ত্রীও। শিশুটিকে ফেলে রেখে স্ত্রীকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে চলে যান ওই ব্যক্তি।

লালবাজার সূত্রে খবর, বেনিয়াপুকুর থানার ওই অফিসারকেও সোমবার সাসপেন্ড করেছে লালবাজার। থানার ওসির বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, ওই অফিসার ঘটনাস্থলে পৌছে শিশুটির খোঁজ করলেও তিনি সেটি অভিযোগ আকারে না লিখে মহিলাকে কড়েয়া থানায় পাঠিয়ে দেন।

এর পরেই মিস ইন্ডিয়া-ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্ত এবং গত শনিবার শহরে তিন যুবকের হাতে এক মহিলা বক্সারের হেনস্থার ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক ভূমিকা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। দু’টি ঘটনাতেই একই রকম ভাবে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। সমস্যার সম্মুখীন দুই মহিলাকেই এক থানা থেকে অন্য থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ। ফলত প্রশ্ন উঠেছে, কড়েয়া থানার তৎপরতায় শিশুটিকে উদ্ধার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেনিয়াপুকুর থানার ওই ডিউটি অফিসারের এ হেন ‘দায়সারা’ আচরণের কারণে শিশুটি বিপদ পড়লে তার দায় কে নিত—এমন প্রশ্নও উঠছে। পুলিশ জানিয়েছে, ফইজ খান এবং আদিল শাকিল নামে দুই ব্যক্তি বাচ্চাটিকে রাস্তায় ঘুরতে দেখে ট্যাংরা থানার জিম্মায় তুলে দেয়। ওই দুই ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

যদিও নিয়ম রয়েছে যে বিপদে পড়লে যে কোনও থানায় অভিযোগ জানানো যায়। লালবাজারের খবর, রবিবারের ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে এ দিন ক্ষুব্ধ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা পুলিশ বাহিনীকে জানান, যে সর্বশেষ ক্রাইম বৈঠকেও থানার এলাকা না দেখে অভিযোগ নেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা মানা হয়নি। কমিশনার সাফ জানিয়েছেন, এ ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে তাঁকে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য না করা হয়।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE