জ্বলন্ত জেসপ। — নিজস্ব চিত্র
নবমীর রাতেই আগুন লেগেছিল সেখানে। ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়, সোমবার সন্ধেয় বন্ধ জেসপ কারখানার ভিতরে ফের সেই জায়গাতেই অগ্নিকাণ্ড। এ দিন দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সব আগুন নিভেছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত না-হতে পারায়, রাতে আরও দশটি ইঞ্জিন পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। গিয়ে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র, শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।
দমকল সূত্রের খবর, বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনতলা কারখানাটির ভিতরে ও বাইরে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। যত্নের অভাবে আগাছায় ও জঙ্গলে ভরেছে ৭০ একর এলাকা জুড়ে গোটা কারখানা। দুর্ভেদ্য জঙ্গল আর অন্ধকার ঠেলে কারখানার ভিতরে সব জায়গায় পৌঁছনোই মুশকিল। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে দৃশ্যমান আগুন নিভে যাওয়ার পরেও আশঙ্কা ছিল, অত বড় কারখানার ভিতরে কোথাও ধিকি ধিকি করে থেকে যেতে পারে আগুন। আর কারখানার ভিতরে অনেক দাহ্য পদার্থ থাকায় বিপদ বাড়তে পারে। সেই কারণেই রাত পর্যন্ত চেষ্টা চলে আনাচ কানাচে পৌঁছনোর।
পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, অত বড় কারখানাটিতে মোট ২৯টি গেট রয়েছে। এ দিন সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ ২৮ নম্বর গেটের ভিতরে স্টোরে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমদম থানার পুলিশ ও দমকলের ইঞ্জিন। কিন্তু গেটের সামনে পরিত্যক্ত একটি বাস থাকায় সেটি সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে দমকলকর্মীদের বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। নবমীর রাতেও ওই গেটের ভিতরেই আগুন ধরেছিল। বাইরে থাকা পরিত্যক্ত বাসটিতেও আগুন লাগে তখন। তার পর থেকেই বাসটিকে গেটের সামনে আড়াআড়ি ভাবে রাখা ছিল।
বারবার কেন বন্ধ কারখানায় আগুন লাগছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পুলিশ-প্রশাসন থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বয়ং শোভনবাবুও। তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন নাশকতার দিকেই। এত দিন ধরে বাসটি কেন গেটের মুখ থেকে সরানো হয়নি, কেনই বা ওই গেটেই ফের আগুন লাগল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। জানান, হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কারখানার ভিতর ও বাইরের চার পাশে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা করা হয়নি বলে কারখানার মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেন তিনি। মালিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘‘পবন ভুঁইয়া হোক বা যে-ই হোক, মালিকের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিং’ শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি।’’ মধ্যরাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ঘোষণা করেন শোভনবাবু।
দমকল সূত্রের খবর, পরিত্যক্ত মিনিবাসের গেট আটকে থাকায় প্রথমে তো কাজ শুরু করতে দেরি হয়ই, তার পর বড় অসুবিধার কারণ হয় কারখানায় আলোর ব্যবস্থা না-থাকা। অন্ধকারে ভিতরে কাজ করতে গিয়ে পায়ে লোহার আলমারি পড়ে গিয়ে এক দমকলকর্মী আহতও হন। নিজেরাই ব্যাটারি-চালিত আলো জ্বালিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যান দমকলকর্মীরা।
অন্য দিকে, সোমবার রাতে কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাগমারি রোডে বন্ধ থাকা একটি ফ্লেক্স তৈরির কারখানা আগুনে প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যায়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গেলেও একটিই আগুন নিভিয়ে ফেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দেনার দায়ে কারখানা-মালিক শঙ্কর রায় বেশ কয়েক মাস ধরে কারখানা বন্ধ রেখেছিলেন। এলাকা থেকেও বেপাত্তা তিনি। স্থানীয়েরা জানান, মাঝেমধ্যে শঙ্করবাবুর স্ত্রী কারখানা খুলতেন। তখন কিছু ফ্লেক্স ছাপাও হতো। তবে বেশির ভাগ সময়ে বন্ধই থাকত কারখানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy