Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বেলগাছিয়া থেকে বেলুড়, এক দিনে পাঁচ অগ্নিকাণ্ড

ভোরে বেলগাছিয়া ট্রামডিপো দিয়ে শুরু। রাতে শেষ খবর পর্যন্ত জ্বলছে বেলুড়ের জুটমিল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শহরের পাঁচ জায়গায় আগুন লাগল সোমবার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনও ঘটনাতেই কেউ হতাহত হননি। এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে বেলগাছিয়ায়।

তপসিয়ায় দমকলের অগ্নিযুদ্ধ। সোমবার।  —নিজস্ব চিত্র।

তপসিয়ায় দমকলের অগ্নিযুদ্ধ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

ভোরে বেলগাছিয়া ট্রামডিপো দিয়ে শুরু। রাতে শেষ খবর পর্যন্ত জ্বলছে বেলুড়ের জুটমিল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শহরের পাঁচ জায়গায় আগুন লাগল সোমবার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনও ঘটনাতেই কেউ হতাহত হননি।

এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে বেলগাছিয়ায়। কাকভোরে আগুনে পুড়ে যায় বেলগাছিয়া ট্রামডিপোর গ্যারাজে রাখা সাতটি বাস। এর পরে বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ আগুন লাগে বেহালার চেতন সেন স্ট্রিটের একটি পোশাকের দোকানে। সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় দোকানটি। বিকেলে আগুন লাগে তপসিয়ার একটি চামড়ার ব্যাগের কারখানায়। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। সেই আগুন আয়ত্তে আনতে রাত হয়ে যায়। এ দিনই সন্ধ্যায় আগুনে ছাই হয়ে যায় বেলেঘাটার একটি রঙের দোকান এবং লাগোয়া একটি সেলুন। রাতে আগুন লাগে বেলুড়ের অম্বিকা জুটমিলে। তবে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডটি তপসিয়ায়, যে ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুরসভার নজরদারি।

তপসিয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ওই কারখানাটি বেআইনি। এর আগেও কসবায় এমনই একটি বেআইনি প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন লেগেছিল। বারবার এ ধরনের গুদাম-কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘিঞ্জি এলাকায় কী ভাবে এমন কারখানা চলছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তপসিয়ায় অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। পুরসভার কর্মীরা ওখানে আছেন। কারখানাটির লাইসেন্স ছিল কি না দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বেলেঘাটার ঘটনারও কারণ জানার চেষ্টা হচ্ছে। এর বেশি কিছু এখন বলতে পারব না।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল ৫টা ২০ নাগাদ তপসিয়া রোড দক্ষিণে চামড়ার কারখানা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। ক্রমশই বাড়তে থাকে ধোঁয়া। জায়গাটি ঘিঞ্জি এলাকা বলে আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন আশপাশের মানুষ। এলাকাবাসীরা জানান, ওই কারখানায় বিভিন্ন শিফ্টে কাজ হয়। আগুন লাগলে কর্মীরা আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের দশটি ইঞ্জিন। পরে আসে আরও পাঁচটি ইঞ্জিন। এলাকাটি অপরিসর হওয়ায় সবক’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। গলির মুখে দাঁড়িয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চলে। শেষ পর্যন্ত রাত প্রায় ৯টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই কারখানায় চামড়ার বেল্ট, ব্যাগ, জুতো তৈরি হয়। ঘটনাস্থল থেকে চামড়ার বড় রোল, শিট ও কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়েছে। তবে ঠিক কী থেকে আগুন লাগে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকলের ডিভিশনাল অফিসার (হেড কোর্য়াটার্স) কমলকুমার নন্দী বলেন, “এখনও পর্যন্ত ওই কারখানায় কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া যায়নি। কারখানাটি বেআইনি কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

বেলগাছিয়ার ঘটনাটি ঘটে এ দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ। দমকল সূত্রের খবর, আচমকা ট্রামডিপোয় দাঁড়ানো একটি বাসে আগুন দেখতে পান সিটিসি-র নিরাপত্তারক্ষীরা। খবর যায় দমকলে। প্রথমে দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। আধ ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আরও চারটি ইঞ্জিন। ততক্ষণে আগুন ধরে গিয়েছে আরও কয়েকটি বাসে। চালকেরা অনেকগুলি বাস সরিয়ে নিতে পারলেও পুড়ে যায় সাতটি বাস। শেষ পর্যন্ত সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। জানা যায়নি আগুন লাগার কারণও। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কোনও বাসের ব্যাটারিতে শর্ট সার্কিট কিংবা ডিপোর মিটারবক্স থেকেও আগুন লেগে থাকতে পারে। যে বাসগুলি পুড়ে গিয়েছে, সেগুলি জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে কেনা বলে ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে।

অন্য দিকে, বেলেঘাটায় রঙের দোকানটিতে আগুন লাগে সন্ধ্যা ৭টা ২০ নাগাদ। দোকানটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। তবে কেউ হতাহত হননি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দোকানের গা ঘেঁষেই ছিল একটি সেলুন। সেটিও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন যখন লাগে, দোকানটি খোলাই ছিল। তবে ভিতরে লোকজন তেমন ছিলেন না। স্থানীয় মানুষ আগুনের শিখা দেখে দমকলে খবর দেন। ন’টি ইঞ্জিন প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, দমকল দেরিতে আসায় আগুন নেভাতে দেরি হয়ে যায়। দমকলের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, দোকানের ভিতরে শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন লাগে।

এর পরে রাতে বেলুড়ের অম্বিকা জুটমিলের ফিনিশিং বিভাগে আগুন লাগে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE