Advertisement
০২ মে ২০২৪
ফুটপাথবাসীদের আশ্রয়

যাঁদের প্রকল্প, জানেন না তাঁরাই

ফুটপাথে বসবাসকারীদের জন্য দু’-দু’টি সরকারি প্রকল্প। একটি মহিলা-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে ফুটপাথবাসী সকলের জন্য। আর অন্যটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য। দু’টি প্রকল্পে প্রতি বছর বরাদ্দও করা হয় লক্ষাধিক টাকা।

দীক্ষা ভুঁইয়া ও সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

ফুটপাথে বসবাসকারীদের জন্য দু’-দু’টি সরকারি প্রকল্প। একটি মহিলা-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে ফুটপাথবাসী সকলের জন্য। আর অন্যটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য। দু’টি প্রকল্পে প্রতি বছর বরাদ্দও করা হয় লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু যাঁদের জন্য এত আয়োজন, সেই ফুটপাথবাসীদের কাছেই খবর নেই এই প্রকল্পগুলির। অভিযোগ, সরকারি ভাবে এই প্রকল্পের কোনও রকম প্রচার কিংবা নজরদারি না থাকাতেই ঝড়-জল-শীতে শহরের ফুটপাথে নিরাপত্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষজন এবং শিশুরা।

সরকারি প্রচার যে নেই, তা অবশ্য স্বীকার করেছেন নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে এই সব হোমগুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাই প্রচার করেন।’’ কিন্তু সরকারি ভাবে প্রচার হয় না কেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে দফতরের সচিব রোশনি সেনের দাবি, ‘‘এই মুহূর্তে রাতের আশ্রয়ের জন্য সরকারের যে ক’টি হোম রয়েছে, সেগুলি সবই ভর্তি। ফলে এখন প্রচার চালালে মানুষকে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে আমরা জায়গা খুঁজছি এ ধরনের আরও হোম তৈরির জন্য। জায়গা বাড়িয়ে নিয়ে ফের নতুন করে প্রচার চালানো হবে।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে পুর-এলাকায় ‘‘গৃহহীন আশ্রয়’’ প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। মূলত দূর-দূরান্ত থেকে শহরে কাজের জন্য আসা পরিবার বা লোকজন, যাঁদের এখানে কোনও থাকার জায়গা নেই, তাঁদের জন্য এই প্রকল্প। যাতে তাঁরা এই সব জায়গায় রাতে আশ্রয় নিতে পারেন। যেখানে ফুটপাথবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি, সেই সব এলাকায় সরকারের তরফে এ ধরনের হোমের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ ভাবে ২টি স্নানঘর, ২টি শৌচালয়-সহ (স্নানঘর ও শৌচালয় একসঙ্গে থাকলে মোট দু’টি) ১০০০ বর্গমিটার এলাকার বাড়িকেই এ ধরনের হোমের জন্য বেছে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া, হোমগুলিতে ২৪ ঘণ্টা জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার পাশাপাশি আবাসিকদের বিছানা ও শীতে কম্বল দেওয়া হয়। আর পথশিশুদের জন্য তৈরি ‘‘ওপেন শেল্টার’’ প্রকল্পে শুধু থাকা নয়, খাওয়া এবং পড়াশোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। বর্তমানে শহরে ৩২টি ‘গৃহহীনদের আশ্রয়স্থল’ এবং পথশিশুদের জন্য ১৮টি ওপেন শেল্টার রয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে খবর, বছর পাঁচেক আগে তৈরি এই প্রকল্প দু’টি হওয়ার সময় থেকেই তারা এর সঙ্গে যুক্ত। তারাই আশ্রয়স্থলের আশপাশের এলাকায় ঘুরে প্রচার চালিয়ে ফুটপাথবাসীদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।

কিন্তু এ রকম দু’টি প্রকল্প চালু থাকার পরেও শহরের ফুটপাথে এত মানুষ খোলা আকাশের তলায় কিংবা প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে সংসার পেতেছেন। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের পূর্ণিমা দাস। ছোট থেকেই মায়ের হাত ধরে কলকাতা শহরে এসে মৌলালির ফুটপাথে আশ্রয় নেন। আর সেখানেই আশপাশের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। বিয়ের পরেও এখানেই রয়ে গিয়েছেন কাজের জন্য। দুই মেয়ে রয়েছে কিন্তু তাদের ফুটপাথে রাখা নিরাপদ নয়। তাই শিয়ালদহের একটি মিশনারি সংস্থায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন পূর্ণিমা। আর তাঁর নিজের ঘর-সংসার এজেসি বোস রোড এবং ক্রিক রো-র সংযোগস্থলে ফুটপাথে।

ক্যানিং থেকে এসে জওহরলাল নেহরু রোডের ফুটপাথে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস কয়েকটি পরিবারের। ছেলেরা বড়বাজারে মুটের কাজ করেন আর মহিলারা আশপাশের ফুটপাথে থাকা দোকান কিংবা পার্ক স্ট্রিটের বাড়িগুলিতে পরিচারিকার কাজ করেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে আশ্রয় বলতে ফুটপাথের প্লাস্টিক। এখানেই ফুটপাথে ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসার ফিরোজা বিবিরও।

প্রচারের অভাবে যেমন প্রকল্পগুলির খোঁজ নেই ফুটপাথবাসীদের কাছে, তেমনি অভিযোগ, শহরের কোন এলাকার কোন ফুটপাথে কত জন থাকেন সে পরিসংখ্যানও নেই সরকারের কাছে। আর তাই ফুটপাথে এখনও অধিকাংশ মানুষই বাস করেন খোলা আকাশের নীচে। তারই প্রমাণ পূর্ণিমা, ফিরোজা বিবিরা। দু’জনই জানালেন, আশ্রয়ের কোনও প্রকল্পের কথাই জানা নেই তাঁদের। কেউ কোনও দিন বলেনওনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

government footpath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE