Advertisement
১১ মে ২০২৪

দখল ফুটপাথে ব্রাত্য পথচারী

সকাল ৯.৩০। চার দিকে জল ছিটিয়ে স্নান করানো চলছে পুরোদমে। আর তা দেখেই ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন মেট্রো থেকে বেরনো অফিসযাত্রী। দুপুর ১২.৩০। ফুটপাথের কোথাও উনুন জ্বেলে রান্না চলছে। কোথাও আবার ফুটপাথ জুড়ে চলছে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়া।

দখলদারি: ফুটপাথ জুড়ে ভবঘুরের সংসার। নিজস্ব চিত্র

দখলদারি: ফুটপাথ জুড়ে ভবঘুরের সংসার। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ১২:৩৫
Share: Save:

সকাল ৯.৩০। চার দিকে জল ছিটিয়ে স্নান করানো চলছে পুরোদমে। আর তা দেখেই ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন মেট্রো থেকে বেরনো অফিসযাত্রী।

দুপুর ১২.৩০। ফুটপাথের কোথাও উনুন জ্বেলে রান্না চলছে। কোথাও আবার ফুটপাথ জুড়ে চলছে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়া। এর জেরে ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন পথচারীরা।

বিকেল ৫টা। শোভাবাজারের ফুটপাথ ধরে লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধা। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি আসতেই আচমকা তাঁর গায়ে উড়ে এলো নোংরা শাড়ি। সেই ঝটকা সামলাতে গিয়ে পড়েই গেলেন ওই বৃদ্ধা।

রাত ১০টা। ফুটপাথ জোড়া ঘুমের সংসার। কোথাও আবার নেশার আসরও বসেছে। সে সব পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাওয়ার ঝুঁকি নেন না কেউই।

দিন-রাতের টুকরো এই ছবি শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাথের। ইতি উতি ছড়ানো উনুন, হাঁড়ি-বাসন, বালতি। ছড়িয়ে রয়েছে এঁটো বাসন। রেলিং-এ নোংরা কাপড়ের স্তূপ। পাশ দিয়ে যেতেই দুর্গন্ধ নাকে আসে। রেহাই মেলেনি পুলিশ কিয়স্ক এবং গার্ড রেলগুলির। কাপড় মেলার স্ট্যান্ড হিসেবে সে সবও দখল হয়ে গিয়েছে। এক ল্যাম্প পোস্ট থেকে অন্য ল্যাম্প পোস্টে দড়ি টাঙিয়ে কাপড় ঝোলানো চলছে অবাধে। দখলের তালিকায় বড় রাস্তার ধারের বাড়ির জানলাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বাড়-বাড়ন্তির অন্যতম কারণ প্রশাসনের বাধা না থাকা।

তাই ফুটপাথ আছে ফুটপাথেই। আর পথচারীর জন্য ভরসা রাস্তাই। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের বন্ধ চার নম্বর গেটটি আগলে বসে গিয়েছে ফুটপাথবাসীর সংসার। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গেটের পাশেই কয়েক বছর আগে একটি এটিএম খোলা হয়েছিল। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় গ্রাহকরা যেতে চাইতেন না ওখানে। অবশেষে সেটিও বন্ধ হয়েছে। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন দু’টি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। সদ্য নির্মিত স্ট্যান্ডটি লোহার রড দিয়ে আটকানো। সেখানে কখনওই ঠাঁই পান না যাত্রীরা। কারণ তার পুরোপুরি দখল ভবঘুরেদের হাতে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বহু পুরনো সমস্যা। আঁকশি ঢুকিয়ে ঘর থেকে জিনিস চুরি হচ্ছিল। নিরাপত্তার খাতিরে জানলা বন্ধ রাখি। জবরদখলকারীর ভিড় এখন আগের থেকে অনেক বেড়েছে।’’

মেট্রো রেল সূত্রে খবর, মেট্রো সংলগ্ন ফুটপাথে ভবঘুরের দখলদারি নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। উচ্ছেদ পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্ব। তবে মেট্রোর ভিতরে যাতে ভবঘুরের অনুপ্রবেশ না ঘটে সে বিষয়ে মেট্রোর নিরাপত্তারক্ষীকে সচেতন করা হবে। লালবাজার সূত্রে খবর, পুলিশ কিয়স্ক বা গার্ড রেল দখল হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুরসভা সাহায্য চাইলে তবেই পুলিশ যাবে উচ্ছেদে।

স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালি সাহা বলেন, ‘‘বহু বার ওঁদের সরাতে সচেষ্টা হয়েছি। কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। জানি না সেটা কি ভাবে সম্ভব!’’ পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা জানান, আলোচনার মাধ্যমে মানবিকতা বজায় রেখেই জবরদখল নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুরসভা উদ্যোগ নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Footpath street hawkers hawker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE