Advertisement
১১ মে ২০২৪

গড়িয়াহাট উস্কে দিল সোদপুরের স্মৃতি

সোদপুর উড়ালপুলের কাছে ৪৮ বছরের পুরনো রেডিমেড সেন্টার সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। মূল নামের আগে ‘আদি’ আর ‘জেকে’ যুক্ত হয়েছে। বাড়ি একই আছে, মাঝে শুধু দেওয়াল উঠেছে চারতলা পর্যন্ত। সোদপুরের এই বস্ত্র বিপণির মালিক এবং কর্মীদের কাছে অভিশপ্ত দিন ১৬ মে।

তখন-এখন: ১১ বছর আগে সোদপুরের রেডিমেড সেন্টারে আগুন নেভানোর পরে (বঁা দিকে)। নতুন চেহারায় সেই বিপণি (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

তখন-এখন: ১১ বছর আগে সোদপুরের রেডিমেড সেন্টারে আগুন নেভানোর পরে (বঁা দিকে)। নতুন চেহারায় সেই বিপণি (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

শীতের দুপুরে দোকানে ক্রেতার ভিড়। বিক্রেতাদের চোখ বারবার চলে যাচ্ছে টিভির দিকে। শনিবার রাতে গড়িয়াহাটের ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার ছবিটা সোদপুরের এক পোশাক বিপণির কর্মীদের ১১ বছর আগের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে।

সোদপুর উড়ালপুলের কাছে ৪৮ বছরের পুরনো রেডিমেড সেন্টার সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। মূল নামের আগে ‘আদি’ আর ‘জেকে’ যুক্ত হয়েছে। বাড়ি একই আছে, মাঝে শুধু দেওয়াল উঠেছে চারতলা পর্যন্ত। সোদপুরের এই বস্ত্র বিপণির মালিক এবং কর্মীদের কাছে অভিশপ্ত দিন ১৬ মে। প্রতি বছর এই দিনে ২০০৮-এর সেই শুক্রবারের স্মৃতি স্মরণ করেন কর্মীরা। কেউ জ্বালান মোমবাতি, কেউ ধূপ। ১১ বছর আগের সেই দুপুরের কথা বলতে গিয়ে মাথা নীচু করেন রানা সাহা। রানার বাবা নারায়ণ এবং কাকা জীবনকৃষ্ণ সাহা রেডিমেড সেন্টারের মালিক ছিলেন সেই সময়ে।

ঘটনার দিন দুপুরে দোকানে যখন ক্রেতাদের ভিড়, দোতলায় রাস্তার দিকের অংশে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে গ্রিল ঝালাইয়ের কাজ চলছিল। নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থা না নিয়েই সেই কাজ চলছিল বলে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল। ঝালাইয়ের যন্ত্র থেকে আগুনের ফুলকি ছিটকে ব্যালকনির কার্পেটে পড়ে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন ছড়াতে সময় লাগেনি। তড়িঘড়ি বাইরের আগুন নেভানো হলেও তা যে দোকানের ভিতরেও ছড়িয়েছে তা বুঝতে পারেননি অনেকেই। ফলে বাইরের আগুন থেকে ভিতরের মালপত্র বাঁচাতে তত ক্ষণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে শাটার নামিয়ে দিয়েছিলেন কেউ। যার মাশুল গুণে বিষাক্ত ধোঁয়ায় (কার্বন-মনোক্সাইড গ্যাস) দম আটকে প্রাণ দিয়েছিলেন ১৩ জন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ১৭ জনকে। মৃতদের মধ্যে রঞ্জনা ও বিমলেন্দু রায় নামে মালিক পরিবারের মেয়ে এবং জামাইও ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন আগুন নেভালেও এই ঘটনা নিয়ে বাম সরকারের মন্ত্রিসভায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত সরেজমিন দেখার পরে ফরেন্সিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আগুন লাগার কারণে মালিক পক্ষের গাফিলতির কথাই জানানো হয় তদন্তের রিপোর্টে। লাইসেন্স বাতিল হয় দোকানের। বছর ঘুরতেই দমকলের নিয়মবিধি মানার মুচলেকা দিয়ে ছাড়পত্র এবং লাইসেন্সও পেয়ে যায় রেডিমেড সেন্টার। ব্যবসা ভাগাভাগি করে নতুন করে সেজেও ওঠে। পুরনো কর্মীদের অনেকে ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েক জন এখনও আছেন। তাঁদেরই এক জন প্রবীর সাহা বলেন, ‘‘১৬ মে এলেই গায়ে কাঁটা দেয়। এখনও ঠিক মতো ঘুমোতে পারি না।’’

অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা, অ্যালার্ম-সহ আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুড়েছে গোটা বাড়িটি। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, সব কিছুই কি নিয়মরক্ষা, নাকি বিপদ এলেও আর ফিরবে না ১৬মে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE