জাকারিয়া স্ট্রিটে ব্যবসায়ী খুনের পরে এলাকায় আতঙ্ক। ফাইল চিত্র
জাকারিয়া স্ট্রিটের রত্ন ব্যবসায়ী মহম্মদ সেলিমের খুনে শেষমেশ তাঁর পরিচিত এক ব্যবসায়ীকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। লালবাজার জানিয়েছে, ধৃতের নাম মহম্মদ আরশাদ ফিরদৌসি। বা়ড়ি একবালপুরে। জাকারিয়া স্ট্রিটে সেলিমের দোকানের কাছেই আরশাদের রত্নের দোকান। এই খুনে আরশাদ ছাড়াও কয়েক জন জড়িত বলে লালবাজারের দাবি। রত্ন লুঠের উদ্দেশ্যেই সেলিমকে খুন করা হয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানান।
সোমবার রাতে জাকারিয়া স্ট্রিটের দোকানেই খুন হন মহম্মদ সেলিম (৫৫)। রাজাবাজারের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ় প্রায় তিরিশ বছর ধরে জহুরি বাজারে ব্যবসা করেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সেলিমের লুঠ হওয়া মোবাইলের সূত্র ধরেই আরশাদকে সন্দেহ হয়েছিল তাদের। মঙ্গলবার রাতে একবালপুর থেকে আটক করা হয় তাঁকে। প্রাথমিক ভাবে জোড়াসাঁকো থানার অফিসারেরা তাঁকে জেরা করলেও আরশাদ অপরাধ কবুল করেননি। পরে গোয়েন্দারা আরশাদকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে চাপ দিতেই ভেঙে পড়েন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘থানা ঠিক মতো জেরা করতে পারছিল না। তাই আরশাদকে বিশেষ ভাবে জেরা করার জন্য গোয়েন্দাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তাতেই কাজ হয়।’’
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার পরেই সেলিমের ফোনে একটি নতুন সিম কার্ড ঢোকানো হয়েছিল। কিন্তু তার মালিকের পরিচয় ছিল ভুয়ো। সেই সিম কার্ড ফের অন্য একটি ফোনে ঢোকানো হয়। ফলে সেই ফোনের আইএমইআই নম্বরটি পুলিশ জানতে পারে। সেটির সূত্র ধরেই জানা যায়, ফোনটি আরশাদের। দেখা যায়, ঘটনার আগে-পরে আরও কয়েক জনের সঙ্গে আরশাদের কথা হয়েছে এবং ঘটনার সময়ে সব ক’টিরই ‘টাওয়ার লোকেশন’ জোড়াসাঁকো এলাকা। কিন্তু জেরায় আরশাদ প্রাথমিক ভাবে জানান, তিনি সোমবার রাতে ওই এলাকায় ছিলেন না। তখনই সন্দেহ দৃঢ় হয় তদন্তকারীদের।
লালবাজার সূত্রের খবর, আরশাদের সঙ্গে এই ঘটনায় একবালপুর এলাকার এক কলের মিস্ত্রি ও এক রঙের মিস্ত্রি-সহ তিন জন জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। ঘটনার পর থেকেই তারা বেপাত্তা। আরশাদকে আটক করার পর থেকে তাদের মোবাইলও বন্ধ। সম্ভবত বর্ধমান হয়ে ভিন্ রাজ্যে চম্পট দিয়েছে ওই তিন জন। এ দিন রাতেই গোয়েন্দাদের একটি দল তাদের ধরতে ভিন্ রাজ্যে রওনা দিয়েছে।
সেলিমকে খুন করা হল কেন?
গোয়েন্দারা জানান, সেলিমের দোকান থেকে দামি রত্ন লুঠ করাই ছিল উদ্দেশ্য। তার ছকও নিপুণ ভাবে সাজানো হয়েছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, আরশাদ তাঁর এলাকার তিন যুবককে আসানসোলের ব্যবসায়ী সাজিয়ে সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করান। তাঁরা সেলিমের দোকানে এসে বেশ কিছু দামি রত্ন দেখেন। তার পরে সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ রত্ন কিনতে আসার কথা ঠিক হয়। এ বার ওই ব্যবসায়ী সেজেই তিন জন দোকানে ঢোকে এবং সেলিমের শ্বাসরোধ করে লুঠ করে। আরশাদ ওই সময়ে এলাকায় থাকলেও দোকানে ঢোকেননি। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘আরশাদও ওই বাজারেরই ব্যবসায়ী। তাই রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ জাকারিয়া স্ট্রিটের নিরাপত্তা যে ঢিলেঢালা থাকে, তিনি ভাল ভাবেই জানতেন। তাই ওই সময়েই খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি।’’
কিন্তু বাকি অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে কবে?
লালবাজারের আশা, ওই তিন অভিযুক্ত ভিন্ রাজ্যে কোথায় পালাতে পারে, সে খবরও গোয়েন্দারা পেয়েছেন। সেই খবরের ভিত্তিতে গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল রওনা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy