আধুনিক: এমন ট্রলিই আনা হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কাজনক রোগীকে হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে ট্রলিতে করে নিয়ে যেতে অথবা অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে অন্যত্র সরানোর সময়ে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বিশেষত একটি ভবন থেকে আর একটি ভবনের দূরত্ব বেশি হলে কী ভাবে স্যালাইন এবং অক্সিজেন চালু থাকা অবস্থায় রোগীকে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেয়। সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় বর্ষায়। খোলা ট্রলিতে যেতে গিয়ে ভিজে যান রোগী।
এই সব সমস্যা দূর করতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এ বার কাচের ট্রলিকে হাতিয়ার করছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। যদিও রোগীর পরিজনেদের প্রশ্ন, অসাবধানতাবশত ব্যবহার করতে গিয়ে ট্রলি ভেঙে গেলে সঙ্কটজনক রোগীর কী হবে? পাশাপাশি প্রয়োজনের সময়ে এই পরিষেবা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ী তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সংশয়কে আমল দিতে নারাজ।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে কাচের ট্রলি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, মেডিসিন, সার্জারি, শিশু, জরুরি বিভাগ-সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে এই ট্রলি রাখা হবে। রোগী যাতে পড়ে না যান, সে জন্য থাকবে বেল্টের বাঁধন। ট্রলির দু’পাশে থাকবে কাচের পাল্লা। রোগীকে শুইয়ে সেই পাল্লা উপরে তুলে আটকে দেওয়া হবে। ফলে বৃষ্টিতে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে নিয়ে যাওয়ার সময়েও রোগী ভিজবেন না। শীঘ্রই মোট ১২টি এই ধরনের আধুনিক ট্রলি ব্যবহার শুরু হবে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জটিল অস্ত্রোপচারের পরে এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কাচের ট্রলি ব্যবহার শুরু হলে সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমবে বলে তাঁদের আশা।
তবে প্রশ্নও থাকছে। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, জরুরি পরিষেবা পেতে বহু সময়ে হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে দৌড়তে হয়। বেশি রাতে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা দায় এড়িয়ে অন্য হাসপাতালে রোগীকে রেফার করেন। এমনকি, রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের সাধারণ ট্রলিও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ ওঠে আকছার। এই অবস্থায় কাচের ট্রলির মতো পরিষেবা প্রয়োজনে এবং সময় মতো পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রোগীর পরিজনেদের একাংশ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই আশঙ্কা অমূলক বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোগী পরিষেবার উন্নতি নিয়ে কতটা ভাবিত, এই ব্যবস্থা সেটাই প্রমাণ করে। তবে এক কর্তা জানিয়েছেন, কোন রোগীর এই বিশেষ ট্রলি প্রয়োজন, তা ঠিক করবে হাসপাতালই।
কোনও রোগীর আত্মীয় যদি অকারণে এই ট্রলি ব্যবহারের আবেদন জানান এবং অনুমতি না মিললে অব্যবস্থার অভিযোগ তোলেন, তা গ্রাহ্য হবে না। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ যাতে নিখরচায় সর্বোচ্চ মানের পরিষেবা পান, সেটা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy