Advertisement
E-Paper

ভক্তির রেশনে অর্ধেক দামে চাল-ডাল

চাল-ডালের দোকানে রেশন? কাঁকুড়গাছি এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটাই চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বছর তিনেক আগে নিজস্ব ‘রেশন ব্যবস্থা’ চালু করেছেন ভক্তিপদ দাস। সেই থেকে তাঁর নাম হয়েছে রেশন ভজা। ভজা তাঁর ডাকনাম।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩০
ভক্তিপদ দাস

ভক্তিপদ দাস

দোকানের ভি়ড় নেমে এসেছে রাস্তায়। নাজেহাল অবস্থা দোকান-মালিক ও কর্মীদের। তাঁর মধ্যেই একে একে দোকানে ঢুকে হলদে রঙা কার্ড দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তাঁদের অবশ্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না।

প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও দোকান-মালিক চিৎকার করে যাচ্ছেন, ‘‘রেশন কার্ড যাঁদের রয়েছে, তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। এগিয়ে আসুন। আপনাদের আগে দেব।’’

কার্ড দেখালেই সকলের আগে? তা নিয়ে প্রতিবাদও নেই বাকিদের! কৌতূহল মিটল এক ক্রেতার কথায়। বললেন, ‘‘এঁরা বিশেষ গ্রাহক। রেশন পান এখানে। ওগুলো রেশন কার্ড।’’

চাল-ডালের দোকানে রেশন? কাঁকুড়গাছি এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটাই চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বছর তিনেক আগে নিজস্ব ‘রেশন ব্যবস্থা’ চালু করেছেন ভক্তিপদ দাস। সেই থেকে তাঁর নাম হয়েছে রেশন ভজা। ভজা তাঁর ডাকনাম। ওই হলুদ কার্ডগুলো ‘রেশন কার্ড’! ভক্তিপদ নিজেই কার্ডগুলি বানিয়ে দিয়েছেন। কার্ড দেখালেই বাজারের অর্ধেক দামে তাঁর দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল, নুন, চিনি, বিস্কুট আর আটা কেনা যায়। গ্রাহক কারা? সুকুমার সামন্ত নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘এলাকার যত গরিব মানুষ, গ্রাহক তাঁরাই।’’ সুকুমারবাবুর দাবি, যাঁরা সত্যিকারের গরিব, তাঁদেরই বেছে বেছে ‘রেশন কার্ড’ করে দেন ভক্তিপদ।

সুকুমারবাবু জানান, ভক্তিপদবাবু গরিব খোঁজার পদ্ধতিও অভিনব। কার্ড পেতে প্রথমে নাম লেখাতে হয়। তার পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভক্তিপদ নিজেই বিচার করেন, আবেদনকারী আদৌ গরিব কি না। বাড়িতে ঢুকেই ভক্তিপদ প্রথমে জানতে চান, আবেদনকারী রান্না কীসে করেন। এর পরে দেখেন শৌচাগার কোথায়। সব শেষে জানতে চান ফোন নম্বর। ভক্তিপদবাবুর যুক্তি, ‘‘মানুষ কীসে রান্না করে, তা থেকেই বোঝা যায় তিনি গরিব না বড়লোক। গ্যাস এখনও বড়লোকদের জন্যই। বড়লোকের নিজস্ব বাথরুম থাকে, গরিব যায় স্টেশনের ধারে বা ভাগাভাগির বাথরুমে। আর যাঁর ফোন নেই, তাঁকে লিস্টে উপরে রাখি।’’

তেল-নুন-আটার দোকানি হয়ে জনসেবার আর্থিক রসদ পান কোথা থেকে? ভক্তিপদবাবুর দাবি, পাইকারি বাজার থেকে যে দামে জিনিস মেলে, অধিকাংশ দোকানিই তার চেয়ে কিছুটা বেশি দামে তা বিক্রি করেন। সেখানেই তাঁদের লাভ। কিন্তু তিনি সেই দামটা ১০-১৫ শতাংশ কম নেন। ফলে তাঁর দোকানে ভিড় বেশি। আর ভিড় বেশি বলেই কম দাম নিয়েও লাভ কম হয় না তাঁর। সেই টাকাই গরিব মানুষের সাহায্যে লাগাতে চান তিনি। অর্থাৎ, একের ভর্তুকি অন্যকে দেওয়া।

ভক্তিপদবাবু বললেন, ‘‘নিজেরা গরিব ছিলাম। অনেক কষ্টে দোকান দাঁড় করিয়েছি। এখন প্রচুর বিক্রি। তা থেকেই ওই পরিবারগুলিকে দিই। রেশনে কেমন জিনিস মেলে, তা তো জানি।’’ তাঁর আক্ষেপ, পুরোটাই বিনামূল্যে দিতে পারলে ভাল হত। বললেন, ‘‘কয়েক জন আসেন, যাঁদের এক টাকাও দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাঁদের না ফেরানোর চেষ্টা করি।’’

কাঁকুড়গাছি রোডে মা আরতি দাস, স্ত্রী ঝর্না এবং দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন ভক্তিপদ। স্বামীর কাজে খুশি ঝর্না। মা আরতিদেবী বলেন, ‘‘ইচ্ছে থাকলেই হয়। এক সময়ে কী ভাবে দিন কাটিয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। তখন রেশনের চাল খেতাম। সেই চাল মুখে তোলা যায় না। এখনও একই অবস্থা। অন্তত রেশনের থেকে একটু ভাল জিনিস ওই মানুষগুলোর পাওনা। ছেলের কাজে গর্ব হয়। আরও অনেকে এ ভাবে ভাবুক।’’

কাঁকুড়গাছির পুষ্প চক্রবর্তী ‘রেশন’ পান ভক্তিপদবাবুর দোকান থেকে। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে একাই থাকেন ওই অশীতিপর বৃদ্ধা। কথা অসংলগ্ন। ওই অবস্থাতেই বললেন, ‘‘আমার থেকে টাকা নেয় না। এ রকম আরও হোক।’’

Grocery shopkeeper ration card Bhaktipada Das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy