শুধুই কলকাতা শহরে নয়। পরিকল্পিত উপনগরী নিউ টাউনের হকার সমস্যাও সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। নিউ টাউনের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের সামনের ফুটপাথ গত দশ-পনেরো বছর ধরেই হকারদের দখলে। উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়া তাঁরাও যে নিজেদের জায়গা ছাড়তে রাজি
নন, তা ইতিমধ্যেই নিউ টাউনের প্রশাসনিক সংস্থা হিডকোকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
নিউ টাউনে ইউনিটেকের বিপরীতে বৃহস্পতিবার একটি নয়া ফুডকোর্টে এ দিন দোকানদারদের চাবি বন্টন করেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ওই ফুড কোর্টের নাম এনকেডিএ মার্কেট। ৭৭ জন খাবার বিক্রেতাকে ওই ফুডকোর্টে পুনর্বাসন দিয়েছে হিডকো। ইউনিটেকের সামনে বসেই তাঁরা বছরের পর বছর ব্যবসা করছিলেন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন,‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না কোনও মানুষের চোখের জল পড়ুক। তাই পুনর্বাসনের মাধ্যমেই হকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রীদের নিয়ে একটি বোর্ড তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকেই হকার সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। আমিও কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। তবে সে সব প্রকাশ্যে বলা যাবে না।’’
ঘটনা যাই হোক, সময়ের সাথে সাথে হকারের চাপ নিউ টাউনেও বেড়েছে। যদিও এই হকারদের সিংহভাগই খাবার বিক্রি করেন। ডিএলএফ-১ ও ২, কোল ইণ্ডিয়া, টিসিএস, আকাঙ্খা মোড়, সিটি সেন্টার-২ এর মতো নিউ টাউনের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাই এখন খাবার বিক্রেতা তথা হকারদের দখলে। তাঁদের যুক্তি, বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে তাঁদের পিছনে। ডিএলএফের কাছে খাবার বিক্রেতা তথা হকারদের একটি সংগঠনের নেতা রমেশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা সরে গেলে এখানে চাকরি করতে আসা মানুষ সমস্যায় পড়বেন। তাঁরা খেতে পাবেন না। আমরা হিডকোর কাছে আবেদন করেছি, যাতে আমাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়। আমরা গরিব মানুষ। এখান থেকে উঠে গেলে আমাদেরও উপোস করতে হবে।’’
হিডকো জানাচ্ছে, পুরনো নিউ টাউন থানার কাছে হকারদের জন্য নতুন আর একটি পুনর্বাসনের জায়গা তৈরি হচ্ছে। ওই এলাকায় যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের ওই জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে। তবে এই পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য শুধু হকারদের সঙ্গেই নয়, হিডকোকে আলোচনা করতে হবে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গেও। ইউনিটেকের সামনের ফুডকোর্ট তৈরি করতে গিয়েও পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। ঠিক কত জন রাস্তায় ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে ক’জন ফু়ডকোর্টে জায়গা পাবেন- তা ঠিক করতে গিয়ে পঞ্চায়েতের সঙ্গে বারবার দর কষাকষি করতে হয়েছে হিডকোকে।
এই মুহূর্তে নিউ টাউনে হকারের সংখ্যা ঠিক কত? হকারেরা জানান, নিউ টাউনে এই মুহূর্তে ১২টি ইউনিট রয়েছে তাঁদের। সেগুলির আওতায় রয়েছেন দু’হাজারের কাছাকাছি হকার। যেহেতু নিউ টাউনে রাস্তা চওড়া, নাগরিক জীবন এখনও ভাল ভাবে ডালপালা মেলেনি, সিংহভাগ মানুষই এখানে আসেন চাকরি করতে— তাই এখনও ফুটপাথ দখলের সমস্যা তেমন ভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি হিডকোকে ভাবাচ্ছে।
হিডকোর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত নজরদারি চলে। তা সত্ত্বেও অনেক সময়ে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে হকারেরা ফুটপাথ দখল করছেন। সম্প্রতি টিসিএসের কাছে হকারদের তৈরি করা বেশ কিছু বাঁশের কাঠামো হিডকো ভেঙেও দিয়েছে। যদিও হিডকোর দাবি, হকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে জায়গা বের করে হকারদের সকলেরই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
তবে সেটা ঠিক কত দিনে হবে, তা স্পষ্ট নয় হিডকোর কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy