Advertisement
১১ মে ২০২৪
Dengue

ডিসেম্বরের আগে মুক্তি নেই ডেঙ্গি থেকে, আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তাদেরই

পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে এবং তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে এ দিন বৈঠকে সকলকে সতর্ক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচতে মশারি ভরসা।

ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচতে মশারি ভরসা। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩৫
Share: Save:

এখনই নিস্তার নেই। ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ থাকবে রাজ্যে। শুক্রবার জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকে এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এল। রাজ্যে মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। উত্তর ২৪ পরগনার দুই বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে এ দিন জানা গিয়েছে। দু’জনেরই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শক সিনড্রোমের উল্লেখ রয়েছে বলে খবর।

বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি থাকায় এ দিন ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে গত এক সপ্তাহে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৯৩৬ জন। সব মিলিয়ে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৬৬। আগামী দু’মাসে সেই সংখ্যাটা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।

পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে এবং তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে এ দিন বৈঠকে সকলকে সতর্ক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। প্রতিটি জেলায় ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজ যাতে ভাল ভাবে হয়, সে দিকে লক্ষ রাখতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং— এই ছ’টি জেলা নিয়েই এখন উদ্বেগ সব থেকে বেশি। এ দিন কলকাতায় কোনও মৃত্যুর খবর না থাকলেও, উত্তর ২৪ পরগনায় দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণের দিক থেকে ওই জেলা একেবারে প্রথমে রয়েছে। ওই জেলার জগদ্দলের বাসিন্দা দীনবন্ধু ঘোষ (৫৫) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। জানা যাচ্ছে, তার আগে বেশ কয়েক দিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন ওই প্রৌঢ়।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগে দু’বার স্ট্রোক হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল দীনবন্ধুর। জ্বর না কমায় যখন তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়, তত ক্ষণে তাঁর হেমারেজিক শক শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করায় ওই প্রৌঢ়কে তড়িঘড়ি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

অন্য দিকে, এ দিন সকালে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মছলন্দপুরের বাসিন্দা প্রতিমা মণ্ডলের (২৪) মৃত্যু হয়েছে। ওই তরুণীও কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আচমকাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ দিনের বৈঠকে প্রতিটি জেলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থার সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য অন্তত ১০টি শয্যার বন্দোবস্ত রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন যাতে মজুত থাকে।

স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এ বার ডেঙ্গি পরিস্থিতি যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে ২০২২ সাল বিগত পাঁচ-ছয় বছরকে অনায়াসে পিছনে ফেলে দেবে। বিশেষত, ২০১৯ সালকে ‘আউটব্রেক’ বছর হিসাবে ধরা হলেও সেই বছরকে পিছনে ফেলে অনেক এগিয়ে গিয়েছে ২০২২। ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৮০ হাজারের ঘরে পৌঁছনোর আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় (৮৮২৭)। তার পরে হাওড়া (৪৮৬৪), কলকাতা (৪৭৪৭), হুগলি (৪৩২৫), মুর্শিদাবাদ (৪২০৯), জলপাইগুড়ি (৩০৫০) ও দার্জিলিং (২,৩৭৮)। আবার এই সমস্ত জেলার মধ্যে উদ্বেগের পুরসভা হল কলকাতা, বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম, হাওড়া, বালি, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, রিষড়া, শিলিগুড়ি ও কালিম্পং। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে এটাও জানা যাচ্ছে, এ বারে শিশুরাও ডেঙ্গিতে ভাল রকম আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন বি সি রায় শিশু হাসপাতালে এই মুহূর্তে ২১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত শিশু চিকিৎসাধীন। গত এক সপ্তাহে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৮২৭।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Dengue Fear
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE