E-Paper

দেদার রামপুজোর হিড়িক শহরে, ভিড় মমতার মিছিলেও

এ দিন সব চেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের রামমন্দিরে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গণেশ টকিজ়ের কাছের একটি মন্দির থেকে মিছিল করে সেখানে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী-সহ বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৯
An image of Traffic

স্তব্ধ: শহরে একাধিক মিছিলের জেরে যানজটে আটকে যানবাহন। সোমবার, গড়িয়াহাটে। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা থেকে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৯২৫ কিলোমিটার। সময় লাগতে পারে ১৯ ঘণ্টারও বেশি। তবু সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের রেশ ভাল রকমই মালুম হল এই শহরে। সকাল থেকেই একাধিক মিছিল বার হল শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে। তাতে গেরুয়া পোশাক পরে, খোল-করতাল বাজাতে বাজাতে, ট্যাবলো সাজিয়ে হাঁটলেন অনেকে। পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে চলল রাম পুজো। দেদার বক্স বাজানো হল রাত পর্যন্ত। মোটরবাইক, ভ্যানরিকশার হ্যান্ডেলে গেরুয়া পতাকা লাগানোর হিড়িকও চোখে পড়ল। সন্ধ্যার পরে আবার অনেকে বাড়ির বারান্দায় এবং কর্মস্থলে প্রদীপ জ্বালালেন। আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে বাজিও ফাটল দেদার। পাল্টা সংহতি মিছিল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন সব চেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের রামমন্দিরে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গণেশ টকিজ়ের কাছের একটি মন্দির থেকে মিছিল করে সেখানে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী-সহ বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতা। এই মিছিলের জন্যই তড়িঘড়ি বরাত দিয়ে কুমোরটুলি থেকে আনানো হয়েছিল রামের দুর্গাপুজো করার মূর্তি। রামমন্দিরের ভিতরে তখন কয়েকশো দর্শনার্থীর ভিড়। রাম-সীতা এবং হনুমানের মূর্তির পুজো চলছে। পাশের বড় স্ক্রিনে সরাসরি দেখানো হচ্ছে অযোধ্যার দৃশ্য। হঠাৎ স্ক্রিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে দেখে সামনের চাতালে শুয়ে পড়লেন বেশ কয়েক জন। পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হল নিমেষে। দ্রুত তা সামাল দিয়ে ‘শেঠ সুরজমল জালান ট্রাস্ট’-এর ৮২ বছরের পুরনো এই রামমন্দিরের ম্যানেজার দীনেশকুমার শর্মা বললেন, ‘‘এত মানুষ আসবেন, ভাবা যায়নি। কাল ভোর থেকে আমরা জেগে আছি। আজও ভোর ৫টায় মন্দিরে পুজো শুরু হয়েছে। রাত থাকতে লোকে এসে এখানে ভিড় করেছিলেন। রাজ্যপালও এসেছিলেন।’’

ওই ভিড় এর পরে রামমন্দির থেকে বেরিয়ে যায় রাস্তার উল্টো দিকের আর একটি মন্দিরে। সেখানে ঘুরে মিছিলের লোকজন এর পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে যান লেবুতলা পার্কের কাছে একটি মাঠে। সেখানে রবিবার থেকেই চলছে পুজো এবং যজ্ঞ। বড় স্ক্রিনে সেখানেও সরাসরি দেখানো হয়েছে অযোধ্যার মন্দির উদ্বোধনের দৃশ্য। সেখানে হাজির এক মহিলা বললেন, ‘‘৫০০ বছরের অপেক্ষার ফল মিলছে। প্রতি বছর এই দিনটিকে রাম দিবস হিসাবে পুজো করার রীতি চালু করা উচিত।’’

বিকেল ৩টে নাগাদ এর পরে পথে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কালীঘাটের মন্দিরে পুজো দিতে ঢোকার সময়ে বাইরে জনতার ঢল নামে। শহরের নানা প্রান্ত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলে যোগ দিতে আসা লরি, বাসের ভিড় চোখে পড়ে। হাজরা মোড় এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তা সে সময়ে পুলিশকে বন্ধ করে দিতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সংহতি মিছিল এর পরে কিছু ক্ষণ দাঁড়ায় গরচা রোডের কাছে। স্কুটারে চড়ে সেখানকার একটি গুরুদ্বারে যান তিনি। তার পরে মিছিল ফের পার্ক সার্কাস সভা মঞ্চের দিকে এগোতে শুরু করে।

মিছিল আসার প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই পার্ক সার্কাস মোড় কার্যত ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় পার্ক সার্কাস মোড় থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাওয়ার রাস্তায়। দিনভর রামভক্তদের যে উন্মাদনা চোখে পড়েছে, তা যেন তখন অনেকটাই ক্ষীণ। সেখানে বিলকিস নামে এক তরুণী বললেন, ‘‘কলেজ শেষে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে এসেছি।’’ ওই রাস্তাতেই কোনও মতে হেঁটে আসা অশীতিপর বৃদ্ধ আব্দুল সামাদ আবার বললেন, ‘‘আদালত রায় দিয়েছে, মসজিদের জায়গায় মন্দির হয়েছে। তা নিয়ে এত মাথাব্যথার কী আছে!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাম আমাদেরও মনে আছেন। কিন্তু পেটের জ্বালা কোনও রাম নামেই যে মেটে না।’’

অশীতিপর সেই বৃদ্ধের দিকে হাত নেড়ে তত ক্ষণে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পড়ন্ত বিকেলে দল বেঁধে এগোতে থাকা সালমা-রুমনারা স্লোগান তুললেন, ‘‘জাত নয়, ভাত চাই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ram Mandir Inauguration Ayodhya Ram Mandir Ayodhya Ram Temple Kolkata Traffic Jam Kolkata Traffic Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy