খোঁজ: এখানেই তৈরি হতো অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
এ বার খাস মহানগরে খোঁজ মিলল অস্ত্র কারখানার!
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে তিলজলার চন্দ্রনাথ রায় রোডের ওই কারখানায় হানা দিয়ে চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে আটটি ৭.৬৫ এমএম সেমি-অটোমেটিক পিস্তল, ৫০ রাউন্ড কার্তুজ, ১৬টি ম্যাগাজিন এবং প্রচুর যন্ত্রাংশ। ধৃতদের আজ, শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হবে। এর আগে গত সোমবার আরও দু’জন অস্ত্র কারবারিকে বন্দর এলাকা থেকে ধরেছিল পুলিশ। তাদের জেরা করেই তিলজলার ওই কারখানার হদিস মেলে। পুলিশের দাবি, ধৃত মহম্মদ সোনু, সৌরভ কুমার, মহম্মদ রাজু এবং সরফরাজ আলম মুঙ্গেরের বাসিন্দা। আটক করা হয়েছে বাড়ির মালিক শেখ বাবুকেও। তদন্তকারীরা জানান, গত দশকে শহরের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের মামলায় পুলিশ ধরেছিল ওই বাবুকে।
গত এক বছরে মহেশতলা, সন্তোষপুর এবং সোনারপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় হানা দিয়ে একাধিক অস্ত্র কারখানার হদিস পেয়েছে সিআইডি ও রাজ্য পুলিশ। এ বারই প্রথম খাস কলকাতায় এমন কারখানার সন্ধান মিলল। পুলিশের দাবি, আট দিন আগে তিলজলার চন্দ্রনাথ রায় রোডের ওই চারতলা বাড়ির একতলায় একটি ফ্ল্যাট মাসিক আট হাজার টাকায় ভাড়া নেয় সরফরাজ আলম। বাড়ির মালিক বাবুকে সে জানায়, ওই ফ্ল্যাটে লেদ কারখানা করা হবে। ওই ফ্ল্যাট থেকে অস্ত্রের পাশাপাশি একাধিক লেদ মেশিন, ড্রিলিং করার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ফার্নেস, ছেনি-হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
কী করে ওই চক্রের সন্ধান পেল পুলিশ?
লালবাজার সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে পশ্চিম বন্দর থানার তদন্তকারীরা এক দুষ্কৃতীর মাধ্যমে জানতে পারেন, বন্দর এলাকায় বেআইনি অস্ত্রের লেনদেন হচ্ছে। চক্রের সদস্যেরা এসেছে মুঙ্গের থেকে। ওই তথ্য মেলার পরেই বিভিন্ন সূত্র খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সোমবার রাতে ধোবিতলা এলাকায় অস্ত্র সরবরাহ করতে কয়েক জন আসবে। এক তদন্তকারী জানান, ওই রাতেই দু’টি মোটরবাইকে চার অস্ত্র কারবারি সেখানে আসে। ইমতিয়াজ আহমেদ ও আফরোজ আহমেদ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বাকিরা পালায়।
পুলিশ জানায়, ওই দু’জনকে জেরা করে জানা যায়, মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিরা শহরে ডেরা বেঁধেছে। কয়েক মাস ধরে বাইপাস লাগোয়া একটি বাড়িতে অস্ত্র কারখানা চলছিল। পরে জায়গার অভাব হওয়ায় এক সপ্তাহ আগে তিলজলার ওই বড় ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তারা।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘মুঙ্গের থেকে এসে ওই দুষ্কৃতীরা এখানে ঘাঁটি গে়ড়েছিল। মোট ছ’জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে তদন্তকারীরা জানান, মুঙ্গেরে পুলিশি ধরপাকড় শুরু হওয়ায় সেখান থেকে পালিয়ে মাস ছয়েক আগে কলকাতায় আসে সরফরাজরা। বাইপাসের কারখানায় দিনে গড়ে দশ থেকে বারোটি অস্ত্র তৈরি করত তারা। তবে তিলজলার ওই কারখানায় এখনও পর্যম্ত কত অস্ত্র তৈরি হয়েছে, তার হিসেব পুলিশ পায়নি। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা ৭.৬৫ এমএম পিস্তল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করত। বাজারে যার দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। পুলিশের ধারণা, বিহার থেকে অস্ত্র তৈরির লোক এনে ওই কারখানা চালানো হত। তার পরে সেই অস্ত্র বিক্রি করা হত বিভিন্ন জায়গায়। শুধু কলকাতা বা জেলাই নয়, সীমান্ত পেরিয়েও সেই অস্ত্র পাচার করা হত বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
শুক্রবার চন্দ্রনাথ রায় রোডের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মালিক শেখ বাবুর ঘর তালা বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাবু ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। আবাসনের প্রথম তলায় বিভিন্ন দোকান ও কারখানা। উপরের তিনটি তলায় আবাসিকেরা থাকেন। বাবু পরিবার নিয়ে চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা শোয়েব খান বলেন, ‘‘ভাবতাম নতুন কারখানা, তাই হয়তো কাজ শুরু হয়নি। ওখান থেকে সাড়াশব্দ পাওয়া যেত না।’’ বহুতলের আর এক ভাড়াটে গুড্ডু জানান, তাঁর প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে। দিন কয়েক আগে তিনি নিজের কারখানার পিছনের দিকের ঘরে কয়েকটি লেদ মেশিন দেখেছিলেন। তাঁর দাবি, এ দিন তিনি কারখানা খুলে দেখেন, পিছনের দিকের দরজা ভাঙা। লেদ মেশিনগুলিও উধাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy