মুম্বইয়ের ট্যাক্সি সংগঠনের নেতা রফিক আহমেদ খান।
হাওড়া থেকে পার্ক সার্কাস যেতে গুনে দিতে হবে হাজার টাকা। তার কমে ট্যাক্সির চাকা গড়াবে না। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশনে নেমে এ কথা শুনতে হল মুম্বইয়ের রফিক আহমেদ খানকে।
রফিক অবশ্য যেমন-তেমন লোক নন। তিনি ‘মুম্বই ট্যাক্সিচালক-মালক সেনা’র (ট্যাক্সি চালক ও মালিকদের সংগঠন) সহ-সভাপতি। শিবসেনার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই সংগঠনের সদস্য-সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। সেই রফিককেই এ দিন সকালে ট্যাক্সি পেতে সকাল ১০টা থেকে প্রায় ১২টা পর্যন্ত হাওড়া স্টেশনে বসে থাকতে হল। তার পরেও অবশ্য ট্যাক্সি পাননি। উল্টে একটি এসি ট্যাক্সি পার্ক সার্কাস যেতে তাঁর কাছে হাজার টাকা চেয়ে বসে। শেষে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে পার্ক সার্কাস যান তিনি।
রফিক আহমেদ অবশ্য কলকাতায় পরিচিত মুখ নন। সম্প্রতি কলকাতার ট্যাক্সিমালিকদের সংগঠন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম নেতা বিমল গুহকেও হেনস্থা হতে হয়েছিল এক ট্যাক্সিচালকের হাতে। সে দিন অবশ্য ট্যাক্সি ধর্মঘট ছিল না।
যে ভাবে এ দিন হঠাত্ ট্যাক্সি ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তাতেও রীতিমতো বিস্মিত রফিক আহমেদ খান। হাওড়ার প্রি-পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বসে তিনি বলেন, “মুম্বইয়ে শেষ ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে। তখন সিএনজি গাড়ি চালু করা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। মুম্বইয়ে এ রকম আচমকা ধর্মঘট করা যায় না।” তিনি জানান, মুম্বইয়ে ধর্মঘট করতে হলে এমন ভাবে দিন বাছতে হয়, যাতে পড়ুয়াদের স্কুলে যেতে এবং সাধারণ মানুষের অফিসে যেতে কোনও অসুবিধা না হয়। ধমর্ঘট করতে হলে ৩৬ ঘণ্টা আগে সরকারকে জানাতে হয়। খবরের কাগজ এবং টিভি চ্যানেলেও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের কারণ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। “এখানে তো দেখলাম কেউ জানেনই না যে, ট্যাক্সি-ধর্মঘট হবে। এমনকী, প্রশাসনের তরফেও কোনও প্রস্তুতি নেই” বলছেন রফিক।
কেন এই ধর্মঘট হচ্ছে, এ দিন হাওড়ায় নেমে তা-ও শুনেছেন রফিক আহমেদ। তিনি জানান, মুম্বইয়ে কোনও ট্যাক্সিচালক যাত্রীকে প্রত্যাখ্যান করলে তাঁকে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। যাত্রীরা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে (আরটিও) এসএমএস করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। পনেরো দিন সংশ্লিষ্ট চালকের লাইসেন্স জমা থাকে আরটিও-র কাছে। তিনি বলেন, “প্রশাসন ট্যাক্সিচালকদের জরিমানা করলে ইউনিয়ন তাতে নাক গলায় না।” অভিযুক্ত চালকের শাস্তি কমিয়ে বা মকুব করে দেওয়ার জন্য মুম্বইয়ে কখনও কোনও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রশাসনের উপরে চাপ দেওয়া হয় না বলেও রফিকের দাবি।
বছর দশেক পরে ঈদ উপলক্ষে মহারাষ্ট্র থেকে এ রাজ্যে এলেন রফিক। থাকছেন রিষড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এ দিন তিনি বেরিয়েছিলেন পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার এবং নারকেলডাঙার কিছু আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু হাওড়ায় পৌঁছে এ দিন এমনই ভোগান্তির অভিজ্ঞতা হল তাঁর। ট্যাক্সির অপেক্ষায় দু’ঘণ্টা পথে বসে থাকার পরে ক্লান্ত রফিক বলেন, “মহারাষ্ট্রে আমরা তো পেরেছি। বাংলা কেন পারছে না, সেটাই আমি বুঝতে পারছি না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy