Advertisement
১৮ মে ২০২৪

প্রতারণার সূত্রে খোঁজ ভুয়ো ব্যাঙ্কের

এক মাস ধরে ব্যাঙ্কের হিসেবরক্ষক পদে কাজ করার পরেও বেতন বা চাকরির নিয়োগপত্র মিলছিল না। সন্দেহ হয়েছিল ওই ব্যক্তির। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, সরকারের খাতায় ওই নামে কোনও ব্যাঙ্কই নেই।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

এক মাস ধরে ব্যাঙ্কের হিসেবরক্ষক পদে কাজ করার পরেও বেতন বা চাকরির নিয়োগপত্র মিলছিল না। সন্দেহ হয়েছিল ওই ব্যক্তির। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, সরকারের খাতায় ওই নামে কোনও ব্যাঙ্কই নেই। এর পরেই তিনি পুলিশে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে গিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলে এক ভুয়ো ব্যাঙ্কের সন্ধান পেলেন বৌবাজার থানার তদন্তকারীরা!

ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার পরে ভুয়ো ব্যাঙ্ক। পুলিশ বলছে, সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার নতুন পদ্ধতি এখন এটাই। জানা গিয়েছে, বাজকুলের ওই ভুয়ো ব্যাঙ্কটির নাম ডিআইসিআইসি ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। জুন মাসে চালু হলেও আপাতত ওই ব্যাঙ্কটি সিল করে দিয়েছে পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ব্যাঙ্কটির সদর দফতরও। সেখান থেকে প্রচুর ভুয়ো সরকারি নথি মিলেছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘বাজকুল বাজারের কাছে একটি ভুয়ো ব্যাঙ্কের শাখা অফিস খুলে টাকা তোলা হচ্ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি ছাড়া চলছিল ব্যাঙ্কটি। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সপ্তাহ দু’য়েক আগে শাখা অফিসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা এবং বৈধ অনুমোদন না নিয়ে আর্থিক সংস্থা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ভুয়ো ব্যাঙ্কের দুই কর্তাকে। তাঁদের নাম প্রেম কুমার এবং সুকুমার দলুই। পুলিশের দাবি, প্রেম ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সুকুমার গ্লোবাল মার্কেটিং হেড। ধৃতদের মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

কী ভাবে ওই ভুয়ো ব্যাঙ্কের সন্ধান মিলল?

তদন্তকারীরা জানান, গত সপ্তাহে বৌবাজার থানায় প্রতারণার অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হেড়িয়ার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মাইতি। তাঁর অভিযোগ ছিল, চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁর থেকে ৭০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। নিজেকে তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। বিবেকানন্দবাবুর অভিযোগ, এলাকায় সদ্য খোলা ডিআইসিআইসি ব্যাঙ্কে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় প্রেম কুমারের। ওই শাখার হিসেবরক্ষক হিসেবে বিবেকানন্দবাবুকে নিয়োগ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রেম। তবে শর্ত ছিল, ওই শাখায় ৫০০ টাকা দিয়ে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। প্রেমের কথা মতো কাজ করেছিলেন বিবেকানন্দবাবু। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সেভিংস অ্যাউন্ট খোলা হলেও ব্যাঙ্কের তরফে তাঁকে কোনও পাসবুক দেওয়া হয়নি।

কিন্তু এর পরেও বেতন বা চাকরির নিয়োগপত্র না পাওয়ায় সন্দেহ হয় বিবেকানন্দবাবুর। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ব্যাঙ্কটিই ভুয়ো। ভূপতিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কিন্তু তত দিনে ব্যাঙ্কের ওই শাখার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পরে গত সপ্তাহে ফের বৌবাজার থানায় অভিযোগ জানান বিবেকানন্দবাবু। তার পরেই তদন্ত চালিয়ে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কের সদর দফতরে হানা দিয়ে প্রেম এবং সুকুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে মোটা টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়ো ব্যাঙ্ক খুলে আমানত সংগ্রহ শুরু হয়েছিল। কমপক্ষে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ওই ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকশো যুবকের থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে প্রায় কয়েক হাজার গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল ওই ভুয়ো ব্যাঙ্কে। কিন্তু কাউকেই পাসবুক বা কোনও ধরনের নথি দেওয়া হয়নি।

(সহ প্রতিবেদন: আনন্দ মণ্ডল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE