সাগর দত্ত হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
প্রথমে এসএসকেএম, পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ যে উঠেছিল, সে সব তদন্তের কী হল! সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার পরে সেই প্রশ্নই উঠে এল।
গত ফেব্রুয়ারিতে এসএসকেএম হাসপাতালে কিডনির অসুখে আক্রান্ত ১১ বছরের সঙ্গীতা চক্রবর্তী নামে এক কিশোরীকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন মানিক ভদ্রের রক্ত ‘বি পজিটিভ’ গ্রুপের। অথচ ১৩ মে তাঁকে ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এসএসকেএমের ক্ষেত্রে বালিকার রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভ’ হলেও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে রোগীর পরিজনের হাতে ‘এবি পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত তুলে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসক ‘টু বি ডিটারমাইন্ড’ লিখে রক্তের যে নমুনা পাঠান, তার গ্রুপ নির্ধারণ এবং ক্রস ম্যাচ করে প্রয়োজনীয় ইউনিটের রক্ত দেওয়ার কথা। এর পরেও গাফিলতি কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
সে সব খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সেই তদন্তে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তেমন খবর অবশ্য নেই। এ দিকে, এসএসকেএমের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, জানতে তথ্য নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ। বুধবার ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে ওই ঘটনায় কারণ দর্শাতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর পরে শুনানির জন্যও ডাকা হয়। হাজির না হওয়ায় আবার ডাকা হয়েছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল। এনআরএসের সেই ঘটনায় পেডিয়াট্রিক বিভাগে চিকিৎসাধীন শিশুর রক্ত ছিল, বম্বে গ্রুপের। সঙ্কটজনক শিশুর রিক্যুইজিশন স্লিপে সই করাতে আড়াই ঘণ্টা পরিবারকে অপেক্ষা করানোর অভিযোগ উঠেছিল ব্লাড ব্যাঙ্কের এক চিকিৎসক ও কর্মীর বিরুদ্ধে। এ দিন সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সদ্য জমা পড়েছে। স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এখনও নির্দেশ আসেনি।’’
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার পলাশ দাসের দাবি, তাঁকে জানানো হয়েছিল, রোগীর রক্তের গ্রুপ যে ‘বি পজিটিভ’ তা প্রথম থেকেই জানা ছিল। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই রক্ত না থাকায় হেমাটোলজির চিকিৎসকের পরামর্শে ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়। রোগী সঙ্কটজনক হলে চিকিৎসা নির্দেশিকা মেনে এমন করা যায়, মত হেমাটোলজির চিকিৎসকদের।
তাহলে প্রথম দিনের ক্রস ম্যাচিংয়ের রিপোর্টে কেন রক্তের গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’ লেখা ছিল? ভারপ্রাপ্ত সুপার বলেন, ‘‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনকই ছিল। হিমোগ্লোবিন ছিল সাড়ে তিন গ্রাম! যা অত্যন্ত কম। রোগীর রক্তে তারতম্য ঘটার জন্য গ্রুপ নির্ধারণে সমস্যা হয়েছে বলে জেনেছি।’’
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান শিক্ষক-চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রক্তে প্রোটিনের মাত্রা বাড়লে, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কম থাকলে রক্তে তারতম্য ঘটতে পারে। কারও যদি ভয়াবহ রক্তাল্পতা হয়, তাহলে লোহিত কণিকা কমে যাওয়াও তারতম্যের সম্ভাব্য কারণ। এ ছাড়া ‘ও’ গ্রুপের রক্তের রোগীকে ‘এ’ গ্রুপের রক্তের ব্যক্তির অস্থিমজ্জা দেওয়া হলেও এটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা দেখতে হবে।’’
সাগর দত্তেও শুরু হয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়া। এ দিন ভারপ্রাপ্ত সুপার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যভবনের এক প্রতিনিধি দল এসেছিল। তদন্ত শেষ হলে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’ প্রশ্ন, কী কারণে রক্ত বিভ্রাট, তা জানা যাবে কবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy