রাস্তার আয়তন ১৪ ফুট (৪.২ মিটার) হলেই এ বার সেখানে চারতলা বাড়ি তৈরি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে নীচের তলায় রাখতে হবে পার্কিং ব্যবস্থা। মঙ্গলবার এমনই সিদ্ধান্ত হল পুরসভার মেয়র পারিষদ বৈঠকে। এ বার তা রাজ্য সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
পুরসভা ইতিমধ্যেই জরিমানা দিয়ে ‘বেআইনি’ নির্মাণকে আইনি করার সংস্থান করে দিয়েছে। এ দিনের সিদ্ধান্ত থেকে অনেকেরই প্রশ্ন, আইন মাফিক চারতলা বাড়ি তৈরির পরে জরিমানা দিয়ে যে তার উপরে আরও তলা বাড়ানো যাবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়? আর যদি তেমনটাই হয়, তবে ‘বহুতল বিধি’ কোথায় দাঁড়াবে? ১৪ ফুট রাস্তার কোনও বহুতলে আগুন লাগলে সেখানে দমকল ঢোকার জায়গা থাকবে তো? প্রশ্ন করা হলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উত্তর, ‘‘অত ব্যাখ্যা দিতে পারব না।’’
তবে মেয়র না বলতে চাইলেও, ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরে। অগ্নিকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দমকল দফতরেও। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভা যদি এ ভাবে নিয়ম তৈরি করে, তবে ভবিষ্যতে কোনও বিপদ ঘটলে উদ্ধারে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন কর্মীরা।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এত কাল নিয়ম ছিল ৫ মিটার চওড়া রাস্তার পাশেও তিনতলার বেশি বড় বাড়ি করা যায় না। সেই নিয়মে দেখা গিয়েছে, বাড়ি তিনতলা হলেও সেখানে গাড়ি রাখার কোনও ব্যবস্থা থাকত না। বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, এমন অনেক তিনতলা বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা রয়েছেন, যাঁদের গাড়ি আছে। নিজেদের বিল্ডিংয়ের তলায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বাইরে রাস্তার উপরেই গাড়ি রাখতে অভ্যস্ত তাঁরা। এর ফলে শহরের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। রাস্তায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি স্তব্ধ হওয়ার পক্ষে যা যথেষ্ট। সেই সব কথা ভেবেই পুরসভার ওই সিদ্ধান্ত বলে জানান ওই অফিসার।
মেয়র বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে ৫ মিটার চওড়া রাস্তার বদলে এখন ৪.২ মিটার রাস্তা পাশেই ‘জি প্লাস থ্রি’ বিল্ডিং বানানো যাবে। অর্থাৎ, রাস্তা চওড়ার পরিমাপও কমবে এবং বাড়ির উচ্চতা একতলা বাড়ানো যাবে নতুন সিদ্ধান্তে।
কেন এই সিদ্ধান্ত? বিল্ডিং দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই ৫ মিটারের কম চওড়া রাস্তায় চারতলা বাড়ি হয়ে গিয়েছে। বেআইনি ভাবেই। তাতে বিল্ডিং দফতরের আয়ও হয় না। তাই রাস্তার মাপ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে চারতলা বাড়ি করার সুযোগ মিলবে। তাতে পুরসভার আয়ও বাড়বে। একই সঙ্গে গাড়ি পার্ক করার জায়গাও মিলবে। যা এই মূহুর্তে কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
দমকলকর্তাদের ব্যাখ্যা, পাঁচতলা বা তার থেকে নিচু বাড়ির ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্র লাগে না। ফলে এ ক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব নেই। গলির মধ্যে ছ’তলা বাড়ি হলে তাঁদের অনুমতি বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। দমকলের অধিকর্তা গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে কিছু এখনও জানানো হয়নি। ওরা জানানোর পরে বলতে পারব।’’ তবে দমকলের একাধিক বর্তমান ও পদস্থ কর্তা বলছেন, গলিতে বাড়ির ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাড়িতেই ক্যান্টিলিভার দিয়ে এলাকা বাড়ানো হয়। ফলে উপরের দিকে জায়গা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ড বা কোনও বিপদের পরে দমকলের গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়। সেটা দেখাও দরকার পুর-প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy