বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাস। রবিবার, শহরের জার্মান দূতাবাসে। ছবি: শৌভিক দে
১১৩ মিনিটের মাথায় গ্যোয়েট্জের গোলের সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠল ঘরটি। ‘কান মিয়ের নিশ্ট ফোর্সটেলেন’ (ভাবতেও পারছিনা), ‘ভির্কলিশ আইনৎসিগারটিগ’ (সত্যিই সুন্দর) হরেক জার্মান উল্লাসের প্রকাশ। একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন সকলে। বহু প্রতীক্ষিত জয়ের দোরগোড়ায় জার্মানি। এই উল্লাস ফের উথলে উঠল খেলা শেষের পরে।
আলিপুরের জার্মান দূতাবাসে রবিবার সমবেত হয়েছিলেন শহরের জার্মানরা। সঙ্গে ভারত ও অন্য কিছু দেশের আমন্ত্রিতেরা। খেলা দেখতে দেখতে কখনও ঝুমঝুমি বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ, কখনও ‘শ্যেন’ (অসাধারণ) বা ‘আউসগেজিশনেট’ (সুন্দর)-এর মতো নানা বিশেষণের ব্যবহার।
কেবল স্বদেশের নয়, আর্জেন্তিনীয় ফুটবলারদের নৈপুণ্য দেখেও চেঁচিয়ে উঠছিলেন সমবেতরা। খেলা শেষে দূতাবাসের অস্থায়ী কনসাল জেনারেল রোসমেরি ই হিল বললেন, “আমি বাভারিয়া থেকে এসেছি। ওখানকার ৩-৪ জন আছেন দলে। এত আনন্দ হচ্ছে, ভাবতে পারছি না।”
বাঙালি স্ত্রী সুনয়না সেনের সঙ্গে দূতাবাসে খেলা দেখতে এসেছিলেন তথ্য প্রযুক্তির পেশাদার জোয়েল ডুনান্ড। ছিলেন পেশায় মডেল জার্মানির গোয়েটিঙ্গেনের মারিনা লাঙ্গ। সাত মাসের খুদে ক্লারা-কে কোলে নিয়ে ছিলেন দূতাবাসের ভাইস কনসাল লেনা শোয়ার্ম। পরনে জার্মান জার্সি। দুই জার্মান রুডলফ কুন্সট আর স্যান্ড্রো নিকোলিনির পাশাপাশি ছিলেন দুই বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার ইংলন্ডের পিটার শ এবং আয়ারল্যান্ডের থমাস ক্লারে। জার্মানি থেকে সাত হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে এ শহরে হেস্টিংস পার্ক রোডে খেলা দেখার সুযোগ এ দিন ছাড়তে চাননি ওঁরা কেউই।
চেয়ার ছিল গোটা চল্লিশ। কিন্তু উপস্থিত দর্শকের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। তাতে কী? আশপাশের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েই হইহই করে খেলা দেখলেন বাকিরা। দেওয়ালে বড় পর্দার দু’পাশে দু’দলের পতাকা। উল্টোদিকের দেওয়ালে জার্মানির আরও একটি পতাকা। আর্জেন্তিনা গোল করতেই (অফসাইডে বাতিল হয়ে যায়) উল্লাসে লাফিয়ে উঠলেন ইতালির স্যান্ড্রো নিকোলিনি আর তাঁর স্ত্রী জিওইয়া।
জার্মানির ডেরায় এসে আপনি আর্জেন্তিনার সমর্থক? স্যান্ড্রো-র জবাব, “ঠিক তা নয়। আমরা নির্দিষ্ট ভাবে কোনও দলের সমর্থক নই। ভাল খেলা দেখলেই লাফিয়ে উঠি।” উপস্থিত ছিলেন ইতালির আরও পাঁচ নাগরিক।
দূতাবাসেই কাজ করেন লুডমেল শ্রেনার। খেলা দেখতে এসেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার-স্বামী আন্ড্রেয়াস শ্যেফারের সঙ্গে। ডুসেলডর্ফের আন্ড্রেয়াস কাজের সুবাদে বছরখানেক ধরে কলকাতায় আছেন। জার্মানির ‘সিউডডয়েচে ৎসাইটুংয়ের’ তন্বী সাংবাদিক মানুয়েলো বার্ম তো প্রায় সারক্ষণ ‘চিয়ার আপ’ করে গেলেন ঝুমঝুমি বাজিয়ে। ঝুমঝুমি বাজালেন পরিবেশকর্মী বনানী কক্করও।
এক দশক ধরে এ শহরের বাসিন্দা পিয়া ভেরোনিকা। ক’দিন আগে পা ভেঙে গিয়েছে। ক্র্যাচে ভর দিয়ে কোনওক্রমে এসেছেন। বললেন, “এমন দিন তো জীবনে খুব বেশি আসবে না।”
এমনিতে ফুটবল কম দেখেন জার্মান শিল্পদ্যোগী ২৪ বছর বয়সী বেনেডিক্ট স্কেলটন। কলকাতায় এসে উঠেছেন সদর স্ট্রিটে। বললেন, “যে রকম উন্মাদনা তৈরি হয়েছে এই খেলা ঘিরে ফাইনালটা না দেখে পারলাম না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy