Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অনুমতি ছাড়া ৫০০ কেজি সোনা বিক্রি

যাঁদের কাছে শুধু বিদেশে গয়না রফতানির লাইসেন্স রয়েছে, দেশ থেকে কাঁচা সোনা কেনার সময়ে তাঁদের সেই সোনার উপরে ধার্য করা আমদানি শুল্ক দিতে হয় না।

উদ্ধার হওয়া সোনা। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া সোনা। —নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১০
Share: Save:

দেশের বাজারে বেআইনি ভাবে ১৫০ কোটি টাকার ৫০০ কিলোগ্রাম গয়না বিক্রি করেছেন তাঁরা। যদিও তাঁদের কাছে দুবাইয়ে সোনা বিক্রির লাইসেন্স থাকলেও নেই দেশে সোনা বিক্রির অনুমোদন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আটক হওয়া বাবা ও ছেলে সঞ্জয় এবং প্রীত অগ্রবালকে শনিবার গ্রেফতার করে ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) এমনই তথ্য পেয়েছে।

যাঁদের কাছে শুধু বিদেশে গয়না রফতানির লাইসেন্স রয়েছে, দেশ থেকে কাঁচা সোনা কেনার সময়ে তাঁদের সেই সোনার উপরে ধার্য করা আমদানি শুল্ক দিতে হয় না। ওই সুবিধা পান বলেই তাঁরা দেশের বাজারে সেই সোনার গয়না বিক্রি করতে পারেন না। অভিযোগ, সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১৫০ কোটি টাকার সোনার গয়না দেশের বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন সঞ্জয় ও প্রীত। তাঁদের মতো আর যাঁদের কাছে এই লাইসেন্স রয়েছে, তাঁরাও একই ভাবে দেশের বাজারে গয়না বিক্রি করছেন কি না, তার খোঁজে তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, শুধু রফতানির গয়না দেশের বাজারে বিক্রিই নয়, বিদেশে সোনার গয়না রফতানি করছেন, এটা দেখানোর জন্য বাবা ও ছেলে হাওয়ালাও করতেন বলে ডিআরআই অভিযোগ করেছে। অভিযোগ, এখান থেকে সঞ্জয় টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে দুবাইয়ে পাঠিয়ে দিতেন। সে দেশেই সোনার গয়না রফতানি করার লাইসেন্স ছিল তাঁদের। সোনা রফতানি করেছেন বলে দুবাই থেকে সেই হাওয়ালার টাকা সরকারি ভাবে তাঁদের ভারতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
এটাও বেআইনি।

ডিআরআই জানিয়েছে, সোনার গয়না বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার আগে শুল্ক দফতরের যে অনুমতি প্রয়োজন, তাও জোগাড় করতেন বাবা ও ছেলে। গত বুধবারও কলকাতা বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেন ২০ বছরের প্রীত। দু’টি টিনের বাক্স ভর্তি সোনার বালা তুলে দেওয়া হয় শুল্ক দফতরের হাতে। বলা হয়, এই বালা নিজের সঙ্গে বিমানে দুবাইয়ে নিয়ে যাবেন প্রীত। যাঁরা রফতানি করেন, তাঁরা এই ধরনের অনুমতি পান। সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে শুল্ক দফতর সেই অনুমতি দেয়।

ডিআরআই জানিয়েছে, সে দিন বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনালে ৫৪ কিলোগ্রাম সোনার বালা ভর্তি ওই দু’টি সিল করা বাক্স শুল্ক অফিসারেরাই তুলে দেন প্রীতের হাতে। কথা ছিল, প্রীত সেই বাক্স দু’টি নিয়ে দুবাই চলে যাবেন। প্রীত গিয়ে দুবাই যাওয়ার উড়ানেও গিয়ে বসেন। কিন্তু তার আগেই ওই টার্মিনালে চুপিসাড়ে ১৬ কোটি টাকার সোনার বালা ভর্তি ওই বাক্স দু’টি তুলে দেন বাবা সঞ্জয়ের হাতে। সঞ্জয় সেই বাক্স দু’টি নিয়ে ছোটেন পণ্য বিভাগে। কলকাতা থেকে হায়দরাবাদের উড়ানে পণ্য হিসেবে সেই সোনার গয়নার বাক্স দু’টি ‘বুক’ করে দিয়ে চলে আসেন টার্মিনালে। আগে থেকেই বাবা ও ছেলের নামে কলকাতা থেকে হায়দরাবাদের বিমান টিকিটও কাটা ছিল।

সেখানেও গোলমাল করে রেখেছিলেন তাঁরা। সঞ্জয় টার্মিনালে ফেরার আগেই প্রীত নিজের নামে হায়দরাবাদ যাওয়ার বোর্ডিং পাস তুলে নেন। সঞ্জয় সেই পাস নিয়ে বিমানে বসেন। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সঞ্জয়ের নাম যাতে যাত্রী-তালিকায় না পাওয়া যায়, তার জন্যই এই পরিকল্পনা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হায়দরাবাদের উড়ান রানওয়ের মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে নামানো হয় সঞ্জয়কে। প্রীতকেও নামিয়ে আনা হয় দুবাইয়ের উড়ান থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE