আড্ডা: গল্পে মেতেছেন যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
রোদের তেজে এক টুকরো ছায়া খুঁজছেন ঘামে জবজবে পথচারী। আর ওঁরা শীতল ঘরে তখন তুমুল আড্ডায় মেতে। কোনও টেবিলে চলছে রাজনীতির তরজা। কোনও টেবিলে কলেজ পড়ুয়াদের নিছক খুনসুটি। মাঝেমধ্যেই আসছে চা-কফি।
নাহ! কোনও বাতানুকূল রেস্তঁরা নয়। আড্ডা জমেছে এক ট্রাম কামরায়। যার নাম ‘স্মরণিকা’। সাড়ে তিন বছর আগে ১৯৩৮ সালের দু কামরার একটি কাঠের ট্রামকে সংস্কার করে তৈরি হয়েছিল এটি। ধর্মতলার ট্রাম ডিপোয় স্মরণিকার একটি কামরা কাফেটেরিয়া, অন্য কামরাটি সংগ্রহশালা। ২০১৪ সালের অক্টোবরে চালুর পর থেকেই আড্ডা এখানে জমজমাট। চায়ে চুমুক দিতে দিতে এক যুবক বললেন, ‘‘মাত্র দশ টাকার বিনিময়ে এক ঘণ্টা বসতে দেওয়া হয় এখানে। সঙ্গে খুব কম টাকায় চা-কফি পাওয়া যায়।’’
কাফেটেরিয়ার পাশের কামরায় রয়েছে ট্রামের সংগ্রহশালা। কলকাতার ট্রামের ইতিহাসের নানা দিক ধরা সেখানে। ঘোড়ার টানা ট্রাম কেমন দেখতে ছিল, তা জানা যাবে এই সংগ্রহশালা থেকে। একটা সময়ে স্টিম ইঞ্জিনে টানা ট্রাম শুরু হয়েছিল কলকাতায়। বারবার দুর্ঘটনা ঘটায় সেই ট্রাম বন্ধ হয়ে যায়। সেই স্টিম ইঞ্জিনে টানা ট্রামের মডেলও দেখা যাবে এখানে। পুরনো ট্রামের টিকিট থেকে এই যানের সঙ্গে জড়িত জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সংগ্রহশালা। কাফেটেরিয়ায় কাজ করেন সিটিসি-র কর্মী জালালউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘কাফেটেরিয়ায় চা খেতে খেতে ট্রামের এই সংগ্রহশালা ঘুরে দেখা উপরি পাওনা।’’ কলকাতার গণ পরিবহণ ও ট্রামের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন শৌভিক মুখোপাধ্যায়। স্মরণিকার সঙ্গে যুক্ত তিনিও। তাঁর মতে, ‘‘এই প্রজন্মের সঙ্গে ট্রামের ইতিহাসের পরিচয় ঘটাচ্ছে এটি।’’
বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে স্মরণিকা। এ ছাড়া বাকি ছ’দিন দুপুর একটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। মূলত ধর্মতলা ট্রাম় ডিপোয় সিটিসি বাস ধরতে আসা যাত্রীরা কাফেটেরিয়ায় ভিড় করেন। যেমন হাওড়ার মন্দিরতলার দিব্যেন্দু রায় ট্রাম ডিপোয় বাস ধরতে এসে দেখলেন, বাস ছাড়তে দেরি। সেই অবসরে প্রথম বার স্মরণিকায় ঢুঁ মেরে অবাক! ঠান্ডা ঘরে দু’কাপ কফি খেয়ে আর সংগ্রহশালা দেখে মুগ্ধ দিব্যেন্দু, ফের আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এক কর্মীর কথায়, প্রথমে এখানে কোনও সময় ধরা ছিল না। দেখা গেল, এক কাপ কফি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেকে বসে থাকেন। অন্যদের তাই সংগ্রহশালা দেখেই চলে যেতে হচ্ছে। তাই এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া। যাত্রীদের থেকে প্রস্তাব উঠেছে, সামনের খোলা জায়গায় কাফেটেরিয়ার পরিধি বাড়ানোর। সিটিসি-র অপারেটিভ ম্যানেজার অনুপম বিশ্বাস বললেন, ‘‘স্মরণিকাকে কী ভাবে আরও বেশি মানুষের কাছে স্মরণীয় করে তোলা যায়, তা নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy