রণক্ষেত্র: গন্ডগোল সামাল দিতে নেমেছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
অভিযোগ উঠেছিল ভুল ঘোষণার। যার জেরে ট্রেনের অপেক্ষায় থেকেও সেটি না থামায় উঠতে পারেননি যাত্রীরা। আর এই ঘটনার পরেই বুধবার ধুন্ধুমার বেধে যায় সোদপুর স্টেশনে। রেল অবরোধ দিয়ে বিক্ষোভের সূচনা হলেও জনরোষ অচিরেই পরিণত হয় তাণ্ডবে। ইচ্ছেমতো নষ্ট করা হয় সরকারি সম্পত্তি, সঙ্গে চলে অবাধ লুঠপাট। রেল অবশ্য দাবি করেছে, ঘোষণায় ভুল ছিল না।
রেলের অভিযোগ, বিক্ষোভের নামে এ দিন ওই স্টেশনে যা হয়েছে, তা অরাজকতারই নামান্তর। টিকিট ভেন্ডিং মেশিনই হোক বা ট্রেনের কামরা— ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি কিছুই। এমনকী, ভাঙচুর চালানো হয় স্টেশন মাস্টারের ঘরেও। সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের কয়েক জন হকারের টাকা এবং জিনিসপত্রও লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। শেষে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল সাড়ে ন’টায় শুরু হওয়া রেল অবরোধ ওঠে বেলা ১২টা নাগাদ। তত ক্ষণে শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বিপর্যস্ত। প্রায় সব ক’টি স্টেশনেই থমকে রয়েছে ট্রেন। যার জেরে চরম নাজেহাল হন অসংখ্য যাত্রী। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
রেলকর্তারা দাবি করেছেন, ভুল ঘোষণা নয়, ট্রেন দেরিতে চলাতেই ছড়ায় বিভ্রান্তি। হালিশহরে ইন্টারলকিং ব্যবস্থার কাজের জন্য ট্রেন যে দেরিতে চলবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল বলে দাবি রেলের। তবে শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভুল ঘোষণার জেরেই গোলমালের সূত্রপাত। একটি লোকাল ট্রেন সোদপুরে থামবে ভেবে অনেকেই প্ল্যাটফর্মের ধারে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ট্রেনটি না থেমে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। তার ফলে অনেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। তা থেকেই বিক্ষোভ।’’ অশেষবাবু জানান, রেলের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। চলছে তদন্ত।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘অবরোধ-বিক্ষোভের জেরে বুধবার ১৫ জোড়া ইএমইউ লোকাল বাতিল হয়েছে। দেরিতে চলেছে ২১টি। তিনটি মেল ট্রেনকে প্রায় ৫০ মিনিট থেমে থাকতে হয়েছে।
কী ঘটেছিল এ দিন?
এ ভাবেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে জনতা। বুধবার, সোদপুর স্টেশনে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
তখন সকাল সাড়ে ন’টা। স্টেশনে হাজার দেড়েক যাত্রীর ভিড়। এ দিন ট্রেন কিছুটা দেরিতে চলছিল। যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হয়, আপ গেদে-শিয়ালদহ লোকাল দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে। ট্রেন ঢুকতে দেখে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মের প্রান্তে এসে দাঁড়ান। অনেকে আবার এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইন পেরিয়ে ট্রেন ধরতে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রেনটি না থেমে বেশ দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। প্ল্যাটফর্মের ধারে থাকা যাত্রীরা কোনওমতে সরে গিয়ে রক্ষা পান। পিছু হটতে গিয়ে সামান্য জখমও হন কয়েক জন।
ট্রেনটি বেরিয়ে যেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা। কয়েক জন লাইনের উপরে বসে পড়েন। আপ ও ডাউন লাইনের উপরে ফেলা হয় রেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। অভিযোগ, এর পরেই বেশ কিছু যাত্রী স্টেশন জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে দেন। টিকিট কাউন্টারে ঢুকে চালানো হয় ভাঙচুর। ভেঙে দেওয়া হয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিনও। এর পরেই তাঁরা চড়াও হন স্টেশন মাস্টারের ঘরে। সেখানেও ভাঙচুর চলে।
প্ল্যাটফর্মের হকারদের অভিযোগ, একদল লোক তাঁদের দোকানে চড়াও হয়ে ঝুড়ি থেকে ফল তুলে লাইনের উপরে ছুড়ে ফেলে। লুঠ করা হয় টাকাও। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তারা ক্ষুব্ধ জনতাকে বাগে আনতে পারেনি। পরে খড়দহ থানা এবং রেলপুলিশের একটি বড় বাহিনী গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার পরে অবরোধ ওঠে।
সোদপুর স্টেশনে ঘোষণা-বিভ্রাটের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। বছরখানেক আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল সেখানে। সে বারও ঘোষণা সত্ত্বেও ট্রেন না থেমে বেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। লাইন পেরোতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। তার পরেও স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy